• আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে যারা কাফিরদের হাতে নিহত হয় তারা শহীদ । জিহাদ করার পর যারা জীবিত থাকে তাদেরকে গাযী বলা হয়। দুনিয়াবি দৃষ্টিকোণ থেকে শহীদরা মৃত। সেহেতু তাদের স্ত্রীগন বিধবা হয়। সন্তানরা ইয়াতিম হয়। তাদের সম্পদ বন্টন করা হয়। মানুষ শহীদকে দাফন করে। অতএব জানা গেল যে, দুনিয়াবি দৃষ্টিকো থেকে শহীদরা মৃত। কিন্তু আল্লাহর কাছে জীবিত থাকেন।
১। শহীদের সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেনঃ
" বরং তারা (শহীদরা) তাদের রবের কাছে জীবিত এবং রিযিক প্রাপ্ত, তারা জীবিত কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পারনা।"
—( সূরা নিসা : ১৬৯ )
২। শহীদ দুনিয়ায় ফিরে আস্তে পারেনা। রসূলুল্ল-হ (সাঃ) বলেছেন—
একবার আল্লাহ্ শহীদগণ-কে জিজ্ঞেস করেন যে, তোমরা কি চাও? উত্তরে শহীদগণ বলেনঃ জান্নাতের মধ্যে যেখানে ইচ্ছা সেখানে বিচরণ, খাওয়া-পান করার আমাদের ইখতিয়ার রয়েছে। এর চেয়ে বেশি কি চাইবে হে আল্লাহ্! আল্লাহ্ ২য় ও ৩য় বার জিজ্ঞেস করলেনঃ (তোমরা কি চাও?) শহীদগণ যখন দেখলেন যে, না চেয়ে উপায় নেই, তখন আল্লাহর কাছে আবেদন করেনঃ হে আমাদের রব! আপনি আমাদের রূহ আমদের শরীরে ফিরিয়ে দিন যাতে আমরা দুনিয়ায় ফিরে গিয়ে আপনার রাস্তায় জিহাদ করে পুনরায় শহীদ হতে পারি। শহীদদের চাহিদা না থাকায় আল্লাহ আর প্রশ্ন করলেন না।
—( মুসলিম : ৪৭৩২)
৩। রাসুলাল্লাহ (সাঃ) বলেন—
শহীদ শাহাদাত বরণ করার সময় কোনো কষ্ট অনুভব করেনা এতটুকু ছাড়া, যেমন তোমাদের কেহকে পিপড়ায় কামড় দিলে তোমরা অনুভব কর।
—( ইব্ন মাজাহ : ২৮০২- আবূ হুরাইরা)
৪। ঋণ ছাড়া শহীদের সকল পাপই ক্ষমা করে দেয়া হয়।
—[ মুসলিম : ৪৭৩০-আ,ই,আস(রাঃ)]
Wednesday, November 13, 2013
Sunday, November 10, 2013
আশুরায়ে মুহাররাম করনীয় ও বর্জনীয়
✔প্রসংগ কথাঃ মুসলিম সমাজে আশুরায়ে মুহাররাম একটি সুপরিচিত বিষয়। বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায় এর কাছে বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো আশুরায়ে মুহাররাম। তাই দেখা যায় অনেকেই এ দিনটিকে শুধুমাত্র শিয়াদের বিশেষ দিন মনে করে থাকেন, আবার কেউ শিয়াদের সংস্পর্শে থাকার কারণে তাদের ঐসব বিড়াল তাপশ কর্মসূচীতেও যোগ দিয়ে থাকেন। আসলে বিষয়টি কি শুধু শিয়াদের জন্যই নির্দিষ্ট না আশুরায়ে মুহাররামে সুন্নী মুসলমানদের জন্য কিছু রয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে বলব । হ্যাঁ অবশ্যই সুন্নী মুসলিমজাতির জন্যও কিছু করণীয় রয়েছে, তবে শিয়াদের দীন-ধর্মে যা প্রমাণিত তাই হলো সুন্নী মুসলমানদের করণীয় তাই হলো সুন্নী মুসলমানদের করণীয়, আসুন আমরা সংক্ষেপে আশুরায়ে মুহাররাম করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় সমূহ জেনে নেই।
✔ পবিত্র মুহাররাম মাসঃ
বছরে মাসের সংখ্যা ও গণনা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুর'আনে বলেন—
" নিশ্চই আল্লা-হর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আর তা আসমান সমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তম্মধ্যে চারটি মাস হারাম বা সম্মানিত। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান, সূতরাং তোমরা এর মধ্যে নিজেদের উপর যুলুম অত্যাচার করনা।"
—( সূরা তাওবা : ৩৬ )
সাহাবী আবূ বাকরাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন তিনি (সাঃ) বলেন—
"বার মাসে এক বছর, তম্মধ্যে চারটি হারাম বা সম্মানিত মাস- যুলকাদাহ, যুলহিজ্জা ও মুহাররাম একত্রে তিন মাস এবং রজব মাস।"
—( সহীহ-উল বুখারী : ২৯৫৮ )
তাই মুহাররাম মাসটি হলো এমন এক সম্মানিত মর্যাদাশালী মাস যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ।
✔ আশুরা কি?ঃ
আশুরা শব্দটির বিশ্লেষণ নিয়ে ভাষাবিদগন বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। অধিকাংশের নিকট মুহাররাম মাসের দশম তারিখেই হলো আশুরার দিন। ইহা আরবী শব্দ (عشر) আশারা হরে নির্গত, যার অর্থ হলো দশ। অতএব মুহাররাম মাসের দশম তারিখে রোযা রাখার নামই হলো আশুরার রোযা।
(দ্রঃ মির'আতুল মাফাতিহ ৭/৪৫ পৃষ্ঠা)
আশুরায়ে মুহাররাম-এর রোযা শুধু উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য নয় বরং ইহা পূর্ববর্তী যুগেও প্রচলিত ছিল।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন—
একদা রসূলুল্ল-হ (সাঃ) এর নিকট আশুরার দিবস সম্পর্কে আলোচনা করা হলে তিনি (সাঃ) বলেন— এদিনে জাহেলী যুগের লোকেরা রোযা রাখতো, অতএব যে (রোযা) রাখতে চায় রাখবে আর যে ছাড়তে চায় ছাড়বে।
—( সহীহ মুসলিম : ২৬৪২ )
সহীহ মুসলিম এর অন্য বর্ণনায় এসেছে আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন— জাহেলী যুগে মক্কায় কুরাইশ বংশের লোকেরা আশুরার রোযা রাখত এবং রসূলুল্ল-হ (সাঃ)-ও আশুরায় রোজা রাখতেন।
—( সহীহ মুসলিম : ২৬৩২ )
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত
তিনি বলেনঃ নবী (সাঃ) যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন দেখলেন যে ইয়াহুদ সম্প্রদায় দশই মুহাররাম আশুরার রোযা রাখছে। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ একি বিষয়? তারা বলল, এ হলো পবিত্র দিন, যে দিনে আল্লাহ্ তা'আলা বানী ইসরাইলকে তাদের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন, ফলে মুসা (আঃ) সে দিনটি শুকরিয়া স্বরূপ রোযা রেখেছেন (আমারও তার অনুসরণ কররাখছি)। নবী (সাঃ) বললেনঃ আমি তোমাদের চেয়ে মূসা (আঃ) এর মত রোযা রাখার বেশী অধিকার রাখি, অতঃপর তিনি রোযা রাখেন এবং অন্যদের রোযা রাখার নির্দেশ দেন।
—( সহীহুল বুখারী : ২০০৪, সহীহ মুসলিম : ১১৩০ )
এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় বর্ধিত অংশ বলা হয়েছে যে, আশুরা এমন একটি দিন, যে দিনে নূহ (আঃ) এর কিশতী জুদী পর্বতে অবতরণ করে ফলে তিনি শুকরিয়া স্বরূপ ঐ দিনটি রোযা রাখেন। অতএব প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী নবী ও উম্মাতের মাঝেও আশুরায়ে মুহাররাম এর রোযা রাখার ইবাদত চালু ছিল।
✔ আশুরায়ে মুহাররাম-এ করণীয়ঃ
আশুরায় মুহাররাম সম্পর্কে আমার পরিচিত হলাম।এখন জানা দরকার কুর'আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আমাদের করণীয় কি?
বিভিন্ন পেপার পত্রিকা ও মুসলিম বিশ্বের বাস্তব অবস্থার প্রতি নজর দিলে দেখা যায় মানুষ চার ভাগে বিভক্ত
√ ১. চরমপন্থি শিয়া সম্প্রদায়:
যাঁদের কাছে এ দিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মূলতঃ তাদের ঐসব কর্মকান্ড মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দীন-ধর্মে ভিক্তিহীন।
√ ২. যারা এদিন সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে গাফেল উদাসীন।
√ ৩. যারা এদিনকে কিছুটা গুরুত্ব দেয় তবে সীমাতিক্রম করে মিলাদ মাহফিল খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি কর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে।
√ ৪. যারা আল-কুর'আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে এদিনটি যথাযথ মূল্যায়ন করে থাকেন। এরাই হল "হক"। ইহাই প্রতিটি উম্মাতের মুহাম্মাদীর উচিত। কুর'আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে অন্য মাস বা দিনের এর ন্যায় দশই মুহাররামে একই ইবাদত, তবে বিশেষ ইবাদত হলো রোযা রাখা।
✔ আশুরায় রোযার ফযীলতঃ
আশুরার রোযার একটি বড় ফযীলতপূর্ণ রোযা, এর বদৌলতে শধু রোযারই ফযীলত পাওয়া যায় না বরং পূর্বের এক বছরের অপরাধ মোচন হয়ে যায়। নবী (সাঃ) বলেনঃ আমি আল্লাহ তা'আলার কাছে আশাবাদী যে, আশুরার রোযার বিনিময় তিনি পূর্বের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ্ মোচন করে দিবেন।
—( সহীহ মুসলিম : ১৯৭৬ )
✔ আশুরার রোযার হুকুম ও সংখ্যাঃ
পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, ইসলাম এর পূর্ব যূগ হতেই এ রোযার প্রচলন রয়েছে, অতঃপর নবী (সাঃ) এর মাধ্যমে তা ইসলামের ইবাদত হিসেবে গন্য হয়। রামাযান এর রোযা ফরয হওয়ার পর ইহা সকলের মতে সুন্নাত। কিন্তু রামাযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে তার হুকুম সম্পর্কে দিদ্বানগন ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন, কেউ ওয়াজিব বলেছেন আবার কেউ সুন্নাত বলেছেন, তবে অনেকেই ওয়াজিব বলেছেন, কারণ নবী (সাঃ) নিজে রোযা রেখেছেন এবং সাহাবীদের রোযা রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্ল-হ (সাঃ) যখন মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করে গেলেন তখন তিনি নিজে রোযা রাখলেন এবং অন্যদের রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর যখন রামাযানের রোযা ফরয হলো তখন তিনি বললেনঃ যার ইচ্ছা হয় আশুরার রোযা রাখবে আর যার ইচ্ছা হয়, না রাখবে।
—(সহীহ মুসলিম : ২৬৩২)
নবী (সাঃ) সর্বপ্রথম আশুরার রোযা হিসেবে মুহাররাম মাসের দশ তারিখে শুধু একটি রোযা রাখেন এবং সে দিনটির ফযীলত বর্ণনা করেন। অতঃপর দশম হিজরীতে নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে ইয়াহুদ সম্প্রদায় এ দিনটিকে খুব মর্যাদা দেয় এবং সে দিনটিতে রোযা রাখে তখন নবী (সাঃ) বলেনঃ যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে নবম তারিখ সহ দু'টি রোযা রাখব। কিন্তু আগামী বছর আসার পূর্বেই তিনি দুনিয়া হতে বিদায় নেন।
—(সহীহ মুসলিম : ২৬৬১)
✔ পবিত্র মুহাররাম মাসঃ
বছরে মাসের সংখ্যা ও গণনা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুর'আনে বলেন—
" নিশ্চই আল্লা-হর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আর তা আসমান সমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তম্মধ্যে চারটি মাস হারাম বা সম্মানিত। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান, সূতরাং তোমরা এর মধ্যে নিজেদের উপর যুলুম অত্যাচার করনা।"
—( সূরা তাওবা : ৩৬ )
সাহাবী আবূ বাকরাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন তিনি (সাঃ) বলেন—
"বার মাসে এক বছর, তম্মধ্যে চারটি হারাম বা সম্মানিত মাস- যুলকাদাহ, যুলহিজ্জা ও মুহাররাম একত্রে তিন মাস এবং রজব মাস।"
—( সহীহ-উল বুখারী : ২৯৫৮ )
তাই মুহাররাম মাসটি হলো এমন এক সম্মানিত মর্যাদাশালী মাস যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ।
✔ আশুরা কি?ঃ
আশুরা শব্দটির বিশ্লেষণ নিয়ে ভাষাবিদগন বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। অধিকাংশের নিকট মুহাররাম মাসের দশম তারিখেই হলো আশুরার দিন। ইহা আরবী শব্দ (عشر) আশারা হরে নির্গত, যার অর্থ হলো দশ। অতএব মুহাররাম মাসের দশম তারিখে রোযা রাখার নামই হলো আশুরার রোযা।
(দ্রঃ মির'আতুল মাফাতিহ ৭/৪৫ পৃষ্ঠা)
আশুরায়ে মুহাররাম-এর রোযা শুধু উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য নয় বরং ইহা পূর্ববর্তী যুগেও প্রচলিত ছিল।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন—
একদা রসূলুল্ল-হ (সাঃ) এর নিকট আশুরার দিবস সম্পর্কে আলোচনা করা হলে তিনি (সাঃ) বলেন— এদিনে জাহেলী যুগের লোকেরা রোযা রাখতো, অতএব যে (রোযা) রাখতে চায় রাখবে আর যে ছাড়তে চায় ছাড়বে।
—( সহীহ মুসলিম : ২৬৪২ )
সহীহ মুসলিম এর অন্য বর্ণনায় এসেছে আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন— জাহেলী যুগে মক্কায় কুরাইশ বংশের লোকেরা আশুরার রোযা রাখত এবং রসূলুল্ল-হ (সাঃ)-ও আশুরায় রোজা রাখতেন।
—( সহীহ মুসলিম : ২৬৩২ )
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত
তিনি বলেনঃ নবী (সাঃ) যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন দেখলেন যে ইয়াহুদ সম্প্রদায় দশই মুহাররাম আশুরার রোযা রাখছে। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ একি বিষয়? তারা বলল, এ হলো পবিত্র দিন, যে দিনে আল্লাহ্ তা'আলা বানী ইসরাইলকে তাদের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন, ফলে মুসা (আঃ) সে দিনটি শুকরিয়া স্বরূপ রোযা রেখেছেন (আমারও তার অনুসরণ কররাখছি)। নবী (সাঃ) বললেনঃ আমি তোমাদের চেয়ে মূসা (আঃ) এর মত রোযা রাখার বেশী অধিকার রাখি, অতঃপর তিনি রোযা রাখেন এবং অন্যদের রোযা রাখার নির্দেশ দেন।
—( সহীহুল বুখারী : ২০০৪, সহীহ মুসলিম : ১১৩০ )
এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় বর্ধিত অংশ বলা হয়েছে যে, আশুরা এমন একটি দিন, যে দিনে নূহ (আঃ) এর কিশতী জুদী পর্বতে অবতরণ করে ফলে তিনি শুকরিয়া স্বরূপ ঐ দিনটি রোযা রাখেন। অতএব প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী নবী ও উম্মাতের মাঝেও আশুরায়ে মুহাররাম এর রোযা রাখার ইবাদত চালু ছিল।
✔ আশুরায়ে মুহাররাম-এ করণীয়ঃ
আশুরায় মুহাররাম সম্পর্কে আমার পরিচিত হলাম।এখন জানা দরকার কুর'আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আমাদের করণীয় কি?
বিভিন্ন পেপার পত্রিকা ও মুসলিম বিশ্বের বাস্তব অবস্থার প্রতি নজর দিলে দেখা যায় মানুষ চার ভাগে বিভক্ত
√ ১. চরমপন্থি শিয়া সম্প্রদায়:
যাঁদের কাছে এ দিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মূলতঃ তাদের ঐসব কর্মকান্ড মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দীন-ধর্মে ভিক্তিহীন।
√ ২. যারা এদিন সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে গাফেল উদাসীন।
√ ৩. যারা এদিনকে কিছুটা গুরুত্ব দেয় তবে সীমাতিক্রম করে মিলাদ মাহফিল খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি কর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে।
√ ৪. যারা আল-কুর'আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে এদিনটি যথাযথ মূল্যায়ন করে থাকেন। এরাই হল "হক"। ইহাই প্রতিটি উম্মাতের মুহাম্মাদীর উচিত। কুর'আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে অন্য মাস বা দিনের এর ন্যায় দশই মুহাররামে একই ইবাদত, তবে বিশেষ ইবাদত হলো রোযা রাখা।
✔ আশুরায় রোযার ফযীলতঃ
আশুরার রোযার একটি বড় ফযীলতপূর্ণ রোযা, এর বদৌলতে শধু রোযারই ফযীলত পাওয়া যায় না বরং পূর্বের এক বছরের অপরাধ মোচন হয়ে যায়। নবী (সাঃ) বলেনঃ আমি আল্লাহ তা'আলার কাছে আশাবাদী যে, আশুরার রোযার বিনিময় তিনি পূর্বের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ্ মোচন করে দিবেন।
—( সহীহ মুসলিম : ১৯৭৬ )
✔ আশুরার রোযার হুকুম ও সংখ্যাঃ
পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, ইসলাম এর পূর্ব যূগ হতেই এ রোযার প্রচলন রয়েছে, অতঃপর নবী (সাঃ) এর মাধ্যমে তা ইসলামের ইবাদত হিসেবে গন্য হয়। রামাযান এর রোযা ফরয হওয়ার পর ইহা সকলের মতে সুন্নাত। কিন্তু রামাযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে তার হুকুম সম্পর্কে দিদ্বানগন ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন, কেউ ওয়াজিব বলেছেন আবার কেউ সুন্নাত বলেছেন, তবে অনেকেই ওয়াজিব বলেছেন, কারণ নবী (সাঃ) নিজে রোযা রেখেছেন এবং সাহাবীদের রোযা রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্ল-হ (সাঃ) যখন মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করে গেলেন তখন তিনি নিজে রোযা রাখলেন এবং অন্যদের রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর যখন রামাযানের রোযা ফরয হলো তখন তিনি বললেনঃ যার ইচ্ছা হয় আশুরার রোযা রাখবে আর যার ইচ্ছা হয়, না রাখবে।
—(সহীহ মুসলিম : ২৬৩২)
নবী (সাঃ) সর্বপ্রথম আশুরার রোযা হিসেবে মুহাররাম মাসের দশ তারিখে শুধু একটি রোযা রাখেন এবং সে দিনটির ফযীলত বর্ণনা করেন। অতঃপর দশম হিজরীতে নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে ইয়াহুদ সম্প্রদায় এ দিনটিকে খুব মর্যাদা দেয় এবং সে দিনটিতে রোযা রাখে তখন নবী (সাঃ) বলেনঃ যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে নবম তারিখ সহ দু'টি রোযা রাখব। কিন্তু আগামী বছর আসার পূর্বেই তিনি দুনিয়া হতে বিদায় নেন।
—(সহীহ মুসলিম : ২৬৬১)
Thursday, November 7, 2013
রামাযান মাসে রাতের সলাত বা তারাবীহ সলাত সম্পর্কে
১| তারাবী অর্থ আরাম করা,বিশ্রাম করা,ধীরে ধীরে। বর্তমানে মুসলিম সমাজে রামাযানে ইশার সলাতের পর রাতের সলাতটি 'তারাবী' সলাত নামেই বিশেষভাবে পরিচিত। পবিত্র কুর'আন ও হাদীসের কোথাও এই তারাবীহ শব্দটির উল্লেখ নেই। হাদীসে এ সলাতকে صلو ة الليل (সালাতুল লাইল), رمضان قيام (কিয়ামে রামাযান),قيام الليل (কিয়ামুল লাইল) ও তাহাজ্জুদ নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহর পবিত্র বানীঃ
২। তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবিদের এমন কতক লোকও আছে যারা দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে, তারা রাত্রিকালে আল্লা-হর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং তারা সেজদাহ করে থাকে।
—(সূরা আল-ইমরান : ১১৩)
৩। আর রাতের কিছু অংশে তার জন্য সাজদাহয় অবনত হও,আর রাতের দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর মহিমা বর্ণনা কর।
—(সূরা দাহর : ২৬)
৪। যে রাত্রির বিভিন্ন প্রহরে সাজদাহ ও দন্ডায়মান অবস্থায় বিনয় ও শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রকাশ করে,আখিরাতকে ভয় করে,আর তার রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে? বলঃ যারা জানে আর যারা জানেনা তারা কি সমান? বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।
—(সূরা যূমার : ৯)
৫। তারা রাত্রিকালে খুব কমই শয়ন করত। আর তারা রাত্রি শেষ প্রহরে ক্ষমা প্রার্থনা করত।
—(সূরা যারিয়াত : ১৭-১৮)
হাদীসঃ
৬। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ
একদা রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীর রাতে বের হয়ে মাসজিদে সলাত আদায় করেন, কিছুসংখ্যক পুরুষ তাঁর পিছনে সলাত আদায় করে। সকালে লোকেরা সম্পর্কে আলোচনা করে,ফলে লোকেরা অধিক সংখ্যায় সমবেত হয়। তিনি সলাত আদায় করেন এবং লোকেরা তাঁর সংগে সলাত আদায় করে।সকালে তারা এ বিষয় আলাপ-আলোচনা করে। তৃতীয় রাতে মাসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। এরপর রসূলুল্ল-হ (সাঃ) মসজিদ থেকে বের হয়ে সলাত আদায় করেন ও লোকেরা তাঁর সংগে সলাত আদায় করে। চতুর্থ রাতে মাসজিদে মুসল্লীর সংকুলান হল না, কিন্তু তিনি রাতে আর বের না হয়ে ফাজরের সলাতে বেরিয়ে এলেন এবং সলাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাশাহহুদ পাঠ করলেন। এরপর বললেনঃ
'আম্মা বাদ' শোন! তোমাদের (গতরাতের) অবস্থান আমার অজানা ছিলনা, কিন্তু আমি এই সলাত তোমাদের উপর ফারয্ হয়ে যাবার আশংকা করেছি (তাই বের হইনি)। কেননা তোমরা তাআদায় করায় অপারগ হয়ে পড়তে। রাসুলাল্লাহ (সাঃ) ৃমৃত্যু হয়ে যায়,আর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায়।
—(বুখারী : ১৮৮০)
৭। আবূ হুরাইরা (রাঃ) আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলাল্লাহ (সাঃ) বলেন— যে ব্যক্তি রামাযান মাসের রাতে ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় সলাত আদায় করবে তার পূর্ববর্তী পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
—(বুখারী : ১৮৭৭)
৮। আবূ সালামা ইব্ন আব্দুর রহমান (রাঃ), আয়িশাহ্ (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলেনঃ রামাযানে রাসুলাল্লাহ (সাঃ)-এর রাতের সলাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেনঃ রসূলুল্ল-হ (সাঃ) রমাযান মাসে এবং রামাযান মাস ছাড়াও (অন্যান্য মাসে রাতের সলাত) এগার রাক'আত র অধিক সলাত করতেন না। চার রাক'আত সলাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই। তারপর চার রাক'আত সলাত আদায় করতেন, তারপর তিন রাকআত সলাত আদায় করতেন। তিনি বলেন, তখন আমি জিজ্ঞেস করলামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ্ আপনার বিতর দায়ের আগে কি আপনি নিদ্রা যান? তিনি বললেনঃ হে আয়িশাহ্! উভয় চোখ তোহ ঘুমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায়না।
—(বুখারী : ১০৭৬; মুসলিম : ১৫৯৩)
৯। আবূ সালাম (রাঃ) বলেন, আমি আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর রাতের সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ তের রাক'আত সলাত আদায় করতেন। আট রাক'আত সলাত আদায় করতেন এবং যখন রুকূ ইচ্ছা করতেন তখন উঠে দাঁড়িয়ে রুকূ করতেন, তারপর আযান ও ইক্বামাতের মাঝে দু'রাক'আত সলাত আদায় করতেন।
—( মুসলিম : ১৫৯৪)
১০। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ রাতের বেলা রাসুলাল্লাহ (সাঃ)-এর সলাত ছিল দশ রাক'আত, এক রাক'আত দিয়ে বিতর আদায় করতেন। আর ফাজরের দু'রাক'আতও (সুন্নাত) আদায় করতেন। এই হল তের রাক'আত।
—(মুসলিম : ১৫৯৭)
১১। যায়িদ ইব্ন খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) বলেন— (আমি স্থির করলাম) আজ রাতে আমি অবশ্যই রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ রাখব। তিনি প্রথমে সংক্ষেপে দু'রাক'আত সলাত আদায় করলেন। তারপর দু'রাক'আত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ দু'রাক'আত সলাত আদায় করলেন। তারপর দু'রাক'আত সলাত আদায় করলেন, যা তার পূর্ববর্তী রাক'আত এর চেয়ে কম দীর্ঘ। তারপর বিতর আদায় করলেন। এই হল মোট তের রাক'আত।
—(মুসলিম : ১৬৭৮)
১২। মাসরুক (রাঃ) বলেন, আমি আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর রাতের সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন- ফাজরের দু'রাক'আত (সুন্নাত) ব্যতীত সাত বা নয় কিংবা এগার রাক'আত।
—(বুখারী : ১০৬৮)
১৩। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন— নাবী মুহাম্মদ (সাঃ) রাতের বেলা তের রাক'আত সলাত আদায় করতেন, বিতর এবং ফাজরের দু'রাক'আত (সুন্নাত)-ও এর অন্তর্ভুক্ত।
—(বুখারী : ১০৬৯)
১৪। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন— একদা রামাযান এর রাতে রসূলুল্ল-হ (সাঃ) স্বীয় গৃহ থেকে বের হয়ে দেখতে পান যে, মাসজিদের এক পাশে কিছু লোক সলাত আদায় করছে। তিনি (সাঃ) জিজ্ঞাস করেনঃ এরা কি করছে? তাঁকে বলা হয়ঃ এদের কুর'আন মুখস্থ না থাকায় তারা উবাই ইবন কা'বের (রাঃ) পিছনে (মুক্তাদী হিসেবে) সালাতুল লাইল (তারাবি) আদায় করছে । নাবী কারিম (সাঃ) বলেন, তারা ঠিক করছে।
—(আবূ দাউদ : ১৩৭৭)
১৫। সায়িব ইব্ন ইয়াযিদ (রাঃ) বলেছেনঃ উমার ইব্ন খাত্তাব (রাঃ),উবাই ইব্ন কা'ব এবং তামীমদারী (রাঃ)-কে লোকজন এর (মুসল্লীগণের) জন্য ১১ রাক'আত (তারাবীহ) কায়েম করতে (পড়াতে) নির্দেশ দিয়েছিলেন।
—[মুয়াত্তা ইমাম মালিক (র)/১ম খন্ড, ১৭১ পৃষ্ঠা]
#[ বিতর ৩ রাক'আত আদায় করলে তারাবী ৮ রাক'আত আর বিতর ১ রাক'আত আদায় করলে তারাবী ১১ রাক'আত আদায় করতে হবে।]
→ উপরোক্ত সহীহ হাদীসের বর্ণনাগুলির সার সংক্ষেপ হল, রামাযান মাস বা রামাযান ছাড়া অন্য মাসে রাসুলাল্লাহ (সাঃ)-এর রাতের নাফল সলাত ছিল ৮ বা ১০ রাক'আত, যা খলিফা উমার (রাঃ) নির্দেশও পাওয়া গেল ৮/১০ রাক'আত। ২০ রাক'আত তারাবী সালাতের বর্ণনা কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়নি এবং খলিফা উমার (রাঃ) এর নির্দেশ এর কথাও বলা হয় নি। এই ২০ রাক'আত তারাবীহ সম্পর্কে কোন কোন মুহাদ্দিস যঈফ বা দুর্বল বলেছেন [মিশকাত শরীফ, তারাবী অধ্যায়, ৩য় খন্ড, লেখক- নূর মুহাম্মাদ আযমী]।
তা ছাড়াও গুত্বপূর্ণ তারাবী-র সলাত ২০ রাক'আত এর বর্ণনা সিহাহ সিত্তাহ অর্থাৎ বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইব্ন মাজাহ,আবূ দাউদ এ সকল হাদীসে উল্লেখ নাই। খলিফা উমার (রাঃ) এর সুস্পষ্ট নির্দেশ এর হাদীসে ১১ রাক'আত বিতরসহ তারাবী সলাতের কথা পাওয়া যায় যা রাসূল (সাঃ) এর আমলের সাথেও মিল আছে। ১১ রাক'আত থেকে বিতর ১ রাক'আত আদায় করলে তারাবী হবে ১০ রাক'আত আর বিতর ৩ রাক'আত আদায় করলে তারাবী হবে ৮ রাক'আত। সে কারণে ৮ বা ১০ রাক'আত তারাবীহ সলাত আদায় করা উত্তম ও দলীল সম্মত। আর সবকিছু সর্বঅজ্ঞ আল্লাহই জানেন।
আল্লাহর পবিত্র বানীঃ
২। তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবিদের এমন কতক লোকও আছে যারা দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে, তারা রাত্রিকালে আল্লা-হর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং তারা সেজদাহ করে থাকে।
—(সূরা আল-ইমরান : ১১৩)
৩। আর রাতের কিছু অংশে তার জন্য সাজদাহয় অবনত হও,আর রাতের দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর মহিমা বর্ণনা কর।
—(সূরা দাহর : ২৬)
৪। যে রাত্রির বিভিন্ন প্রহরে সাজদাহ ও দন্ডায়মান অবস্থায় বিনয় ও শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রকাশ করে,আখিরাতকে ভয় করে,আর তার রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে? বলঃ যারা জানে আর যারা জানেনা তারা কি সমান? বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।
—(সূরা যূমার : ৯)
৫। তারা রাত্রিকালে খুব কমই শয়ন করত। আর তারা রাত্রি শেষ প্রহরে ক্ষমা প্রার্থনা করত।
—(সূরা যারিয়াত : ১৭-১৮)
হাদীসঃ
৬। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ
একদা রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীর রাতে বের হয়ে মাসজিদে সলাত আদায় করেন, কিছুসংখ্যক পুরুষ তাঁর পিছনে সলাত আদায় করে। সকালে লোকেরা সম্পর্কে আলোচনা করে,ফলে লোকেরা অধিক সংখ্যায় সমবেত হয়। তিনি সলাত আদায় করেন এবং লোকেরা তাঁর সংগে সলাত আদায় করে।সকালে তারা এ বিষয় আলাপ-আলোচনা করে। তৃতীয় রাতে মাসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। এরপর রসূলুল্ল-হ (সাঃ) মসজিদ থেকে বের হয়ে সলাত আদায় করেন ও লোকেরা তাঁর সংগে সলাত আদায় করে। চতুর্থ রাতে মাসজিদে মুসল্লীর সংকুলান হল না, কিন্তু তিনি রাতে আর বের না হয়ে ফাজরের সলাতে বেরিয়ে এলেন এবং সলাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাশাহহুদ পাঠ করলেন। এরপর বললেনঃ
'আম্মা বাদ' শোন! তোমাদের (গতরাতের) অবস্থান আমার অজানা ছিলনা, কিন্তু আমি এই সলাত তোমাদের উপর ফারয্ হয়ে যাবার আশংকা করেছি (তাই বের হইনি)। কেননা তোমরা তাআদায় করায় অপারগ হয়ে পড়তে। রাসুলাল্লাহ (সাঃ) ৃমৃত্যু হয়ে যায়,আর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায়।
—(বুখারী : ১৮৮০)
৭। আবূ হুরাইরা (রাঃ) আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলাল্লাহ (সাঃ) বলেন— যে ব্যক্তি রামাযান মাসের রাতে ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় সলাত আদায় করবে তার পূর্ববর্তী পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
—(বুখারী : ১৮৭৭)
৮। আবূ সালামা ইব্ন আব্দুর রহমান (রাঃ), আয়িশাহ্ (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলেনঃ রামাযানে রাসুলাল্লাহ (সাঃ)-এর রাতের সলাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেনঃ রসূলুল্ল-হ (সাঃ) রমাযান মাসে এবং রামাযান মাস ছাড়াও (অন্যান্য মাসে রাতের সলাত) এগার রাক'আত র অধিক সলাত করতেন না। চার রাক'আত সলাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই। তারপর চার রাক'আত সলাত আদায় করতেন, তারপর তিন রাকআত সলাত আদায় করতেন। তিনি বলেন, তখন আমি জিজ্ঞেস করলামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ্ আপনার বিতর দায়ের আগে কি আপনি নিদ্রা যান? তিনি বললেনঃ হে আয়িশাহ্! উভয় চোখ তোহ ঘুমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায়না।
—(বুখারী : ১০৭৬; মুসলিম : ১৫৯৩)
৯। আবূ সালাম (রাঃ) বলেন, আমি আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর রাতের সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ তের রাক'আত সলাত আদায় করতেন। আট রাক'আত সলাত আদায় করতেন এবং যখন রুকূ ইচ্ছা করতেন তখন উঠে দাঁড়িয়ে রুকূ করতেন, তারপর আযান ও ইক্বামাতের মাঝে দু'রাক'আত সলাত আদায় করতেন।
—( মুসলিম : ১৫৯৪)
১০। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ রাতের বেলা রাসুলাল্লাহ (সাঃ)-এর সলাত ছিল দশ রাক'আত, এক রাক'আত দিয়ে বিতর আদায় করতেন। আর ফাজরের দু'রাক'আতও (সুন্নাত) আদায় করতেন। এই হল তের রাক'আত।
—(মুসলিম : ১৫৯৭)
১১। যায়িদ ইব্ন খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) বলেন— (আমি স্থির করলাম) আজ রাতে আমি অবশ্যই রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ রাখব। তিনি প্রথমে সংক্ষেপে দু'রাক'আত সলাত আদায় করলেন। তারপর দু'রাক'আত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ দু'রাক'আত সলাত আদায় করলেন। তারপর দু'রাক'আত সলাত আদায় করলেন, যা তার পূর্ববর্তী রাক'আত এর চেয়ে কম দীর্ঘ। তারপর বিতর আদায় করলেন। এই হল মোট তের রাক'আত।
—(মুসলিম : ১৬৭৮)
১২। মাসরুক (রাঃ) বলেন, আমি আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর রাতের সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন- ফাজরের দু'রাক'আত (সুন্নাত) ব্যতীত সাত বা নয় কিংবা এগার রাক'আত।
—(বুখারী : ১০৬৮)
১৩। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন— নাবী মুহাম্মদ (সাঃ) রাতের বেলা তের রাক'আত সলাত আদায় করতেন, বিতর এবং ফাজরের দু'রাক'আত (সুন্নাত)-ও এর অন্তর্ভুক্ত।
—(বুখারী : ১০৬৯)
১৪। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন— একদা রামাযান এর রাতে রসূলুল্ল-হ (সাঃ) স্বীয় গৃহ থেকে বের হয়ে দেখতে পান যে, মাসজিদের এক পাশে কিছু লোক সলাত আদায় করছে। তিনি (সাঃ) জিজ্ঞাস করেনঃ এরা কি করছে? তাঁকে বলা হয়ঃ এদের কুর'আন মুখস্থ না থাকায় তারা উবাই ইবন কা'বের (রাঃ) পিছনে (মুক্তাদী হিসেবে) সালাতুল লাইল (তারাবি) আদায় করছে । নাবী কারিম (সাঃ) বলেন, তারা ঠিক করছে।
—(আবূ দাউদ : ১৩৭৭)
১৫। সায়িব ইব্ন ইয়াযিদ (রাঃ) বলেছেনঃ উমার ইব্ন খাত্তাব (রাঃ),উবাই ইব্ন কা'ব এবং তামীমদারী (রাঃ)-কে লোকজন এর (মুসল্লীগণের) জন্য ১১ রাক'আত (তারাবীহ) কায়েম করতে (পড়াতে) নির্দেশ দিয়েছিলেন।
—[মুয়াত্তা ইমাম মালিক (র)/১ম খন্ড, ১৭১ পৃষ্ঠা]
#[ বিতর ৩ রাক'আত আদায় করলে তারাবী ৮ রাক'আত আর বিতর ১ রাক'আত আদায় করলে তারাবী ১১ রাক'আত আদায় করতে হবে।]
→ উপরোক্ত সহীহ হাদীসের বর্ণনাগুলির সার সংক্ষেপ হল, রামাযান মাস বা রামাযান ছাড়া অন্য মাসে রাসুলাল্লাহ (সাঃ)-এর রাতের নাফল সলাত ছিল ৮ বা ১০ রাক'আত, যা খলিফা উমার (রাঃ) নির্দেশও পাওয়া গেল ৮/১০ রাক'আত। ২০ রাক'আত তারাবী সালাতের বর্ণনা কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়নি এবং খলিফা উমার (রাঃ) এর নির্দেশ এর কথাও বলা হয় নি। এই ২০ রাক'আত তারাবীহ সম্পর্কে কোন কোন মুহাদ্দিস যঈফ বা দুর্বল বলেছেন [মিশকাত শরীফ, তারাবী অধ্যায়, ৩য় খন্ড, লেখক- নূর মুহাম্মাদ আযমী]।
তা ছাড়াও গুত্বপূর্ণ তারাবী-র সলাত ২০ রাক'আত এর বর্ণনা সিহাহ সিত্তাহ অর্থাৎ বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইব্ন মাজাহ,আবূ দাউদ এ সকল হাদীসে উল্লেখ নাই। খলিফা উমার (রাঃ) এর সুস্পষ্ট নির্দেশ এর হাদীসে ১১ রাক'আত বিতরসহ তারাবী সলাতের কথা পাওয়া যায় যা রাসূল (সাঃ) এর আমলের সাথেও মিল আছে। ১১ রাক'আত থেকে বিতর ১ রাক'আত আদায় করলে তারাবী হবে ১০ রাক'আত আর বিতর ৩ রাক'আত আদায় করলে তারাবী হবে ৮ রাক'আত। সে কারণে ৮ বা ১০ রাক'আত তারাবীহ সলাত আদায় করা উত্তম ও দলীল সম্মত। আর সবকিছু সর্বঅজ্ঞ আল্লাহই জানেন।
Subscribe to:
Posts (Atom)