✔প্রসংগ কথাঃ মুসলিম সমাজে আশুরায়ে মুহাররাম একটি সুপরিচিত বিষয়। বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায় এর কাছে বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো আশুরায়ে মুহাররাম। তাই দেখা যায় অনেকেই এ দিনটিকে শুধুমাত্র শিয়াদের বিশেষ দিন মনে করে থাকেন, আবার কেউ শিয়াদের সংস্পর্শে থাকার কারণে তাদের ঐসব বিড়াল তাপশ কর্মসূচীতেও যোগ দিয়ে থাকেন। আসলে বিষয়টি কি শুধু শিয়াদের জন্যই নির্দিষ্ট না আশুরায়ে মুহাররামে সুন্নী মুসলমানদের জন্য কিছু রয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে বলব । হ্যাঁ অবশ্যই সুন্নী মুসলিমজাতির জন্যও কিছু করণীয় রয়েছে, তবে শিয়াদের দীন-ধর্মে যা প্রমাণিত তাই হলো সুন্নী মুসলমানদের করণীয় তাই হলো সুন্নী মুসলমানদের করণীয়, আসুন আমরা সংক্ষেপে আশুরায়ে মুহাররাম করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় সমূহ জেনে নেই।
✔ পবিত্র মুহাররাম মাসঃ
বছরে মাসের সংখ্যা ও গণনা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুর'আনে বলেন—
" নিশ্চই আল্লা-হর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আর তা আসমান সমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তম্মধ্যে চারটি মাস হারাম বা সম্মানিত। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান, সূতরাং তোমরা এর মধ্যে নিজেদের উপর যুলুম অত্যাচার করনা।"
—( সূরা তাওবা : ৩৬ )
সাহাবী আবূ বাকরাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন তিনি (সাঃ) বলেন—
"বার মাসে এক বছর, তম্মধ্যে চারটি হারাম বা সম্মানিত মাস- যুলকাদাহ, যুলহিজ্জা ও মুহাররাম একত্রে তিন মাস এবং রজব মাস।"
—( সহীহ-উল বুখারী : ২৯৫৮ )
তাই মুহাররাম মাসটি হলো এমন এক সম্মানিত মর্যাদাশালী মাস যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ।
✔ আশুরা কি?ঃ
আশুরা শব্দটির বিশ্লেষণ নিয়ে ভাষাবিদগন বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। অধিকাংশের নিকট মুহাররাম মাসের দশম তারিখেই হলো আশুরার দিন। ইহা আরবী শব্দ (عشر) আশারা হরে নির্গত, যার অর্থ হলো দশ। অতএব মুহাররাম মাসের দশম তারিখে রোযা রাখার নামই হলো আশুরার রোযা।
(দ্রঃ মির'আতুল মাফাতিহ ৭/৪৫ পৃষ্ঠা)
আশুরায়ে মুহাররাম-এর রোযা শুধু উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য নয় বরং ইহা পূর্ববর্তী যুগেও প্রচলিত ছিল।
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন—
একদা রসূলুল্ল-হ (সাঃ) এর নিকট আশুরার দিবস সম্পর্কে আলোচনা করা হলে তিনি (সাঃ) বলেন— এদিনে জাহেলী যুগের লোকেরা রোযা রাখতো, অতএব যে (রোযা) রাখতে চায় রাখবে আর যে ছাড়তে চায় ছাড়বে।
—( সহীহ মুসলিম : ২৬৪২ )
সহীহ মুসলিম এর অন্য বর্ণনায় এসেছে আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন— জাহেলী যুগে মক্কায় কুরাইশ বংশের লোকেরা আশুরার রোযা রাখত এবং রসূলুল্ল-হ (সাঃ)-ও আশুরায় রোজা রাখতেন।
—( সহীহ মুসলিম : ২৬৩২ )
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত
তিনি বলেনঃ নবী (সাঃ) যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন দেখলেন যে ইয়াহুদ সম্প্রদায় দশই মুহাররাম আশুরার রোযা রাখছে। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ একি বিষয়? তারা বলল, এ হলো পবিত্র দিন, যে দিনে আল্লাহ্ তা'আলা বানী ইসরাইলকে তাদের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন, ফলে মুসা (আঃ) সে দিনটি শুকরিয়া স্বরূপ রোযা রেখেছেন (আমারও তার অনুসরণ কররাখছি)। নবী (সাঃ) বললেনঃ আমি তোমাদের চেয়ে মূসা (আঃ) এর মত রোযা রাখার বেশী অধিকার রাখি, অতঃপর তিনি রোযা রাখেন এবং অন্যদের রোযা রাখার নির্দেশ দেন।
—( সহীহুল বুখারী : ২০০৪, সহীহ মুসলিম : ১১৩০ )
এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় বর্ধিত অংশ বলা হয়েছে যে, আশুরা এমন একটি দিন, যে দিনে নূহ (আঃ) এর কিশতী জুদী পর্বতে অবতরণ করে ফলে তিনি শুকরিয়া স্বরূপ ঐ দিনটি রোযা রাখেন। অতএব প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী নবী ও উম্মাতের মাঝেও আশুরায়ে মুহাররাম এর রোযা রাখার ইবাদত চালু ছিল।
✔ আশুরায়ে মুহাররাম-এ করণীয়ঃ
আশুরায় মুহাররাম সম্পর্কে আমার পরিচিত হলাম।এখন জানা দরকার কুর'আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আমাদের করণীয় কি?
বিভিন্ন পেপার পত্রিকা ও মুসলিম বিশ্বের বাস্তব অবস্থার প্রতি নজর দিলে দেখা যায় মানুষ চার ভাগে বিভক্ত
√ ১. চরমপন্থি শিয়া সম্প্রদায়:
যাঁদের কাছে এ দিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মূলতঃ তাদের ঐসব কর্মকান্ড মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দীন-ধর্মে ভিক্তিহীন।
√ ২. যারা এদিন সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে গাফেল উদাসীন।
√ ৩. যারা এদিনকে কিছুটা গুরুত্ব দেয় তবে সীমাতিক্রম করে মিলাদ মাহফিল খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি কর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে।
√ ৪. যারা আল-কুর'আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে এদিনটি যথাযথ মূল্যায়ন করে থাকেন। এরাই হল "হক"। ইহাই প্রতিটি উম্মাতের মুহাম্মাদীর উচিত। কুর'আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে অন্য মাস বা দিনের এর ন্যায় দশই মুহাররামে একই ইবাদত, তবে বিশেষ ইবাদত হলো রোযা রাখা।
✔ আশুরায় রোযার ফযীলতঃ
আশুরার রোযার একটি বড় ফযীলতপূর্ণ রোযা, এর বদৌলতে শধু রোযারই ফযীলত পাওয়া যায় না বরং পূর্বের এক বছরের অপরাধ মোচন হয়ে যায়। নবী (সাঃ) বলেনঃ আমি আল্লাহ তা'আলার কাছে আশাবাদী যে, আশুরার রোযার বিনিময় তিনি পূর্বের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ্ মোচন করে দিবেন।
—( সহীহ মুসলিম : ১৯৭৬ )
✔ আশুরার রোযার হুকুম ও সংখ্যাঃ
পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, ইসলাম এর পূর্ব যূগ হতেই এ রোযার প্রচলন রয়েছে, অতঃপর নবী (সাঃ) এর মাধ্যমে তা ইসলামের ইবাদত হিসেবে গন্য হয়। রামাযান এর রোযা ফরয হওয়ার পর ইহা সকলের মতে সুন্নাত। কিন্তু রামাযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে তার হুকুম সম্পর্কে দিদ্বানগন ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন, কেউ ওয়াজিব বলেছেন আবার কেউ সুন্নাত বলেছেন, তবে অনেকেই ওয়াজিব বলেছেন, কারণ নবী (সাঃ) নিজে রোযা রেখেছেন এবং সাহাবীদের রোযা রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্ল-হ (সাঃ) যখন মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করে গেলেন তখন তিনি নিজে রোযা রাখলেন এবং অন্যদের রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর যখন রামাযানের রোযা ফরয হলো তখন তিনি বললেনঃ যার ইচ্ছা হয় আশুরার রোযা রাখবে আর যার ইচ্ছা হয়, না রাখবে।
—(সহীহ মুসলিম : ২৬৩২)
নবী (সাঃ) সর্বপ্রথম আশুরার রোযা হিসেবে মুহাররাম মাসের দশ তারিখে শুধু একটি রোযা রাখেন এবং সে দিনটির ফযীলত বর্ণনা করেন। অতঃপর দশম হিজরীতে নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে ইয়াহুদ সম্প্রদায় এ দিনটিকে খুব মর্যাদা দেয় এবং সে দিনটিতে রোযা রাখে তখন নবী (সাঃ) বলেনঃ যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে নবম তারিখ সহ দু'টি রোযা রাখব। কিন্তু আগামী বছর আসার পূর্বেই তিনি দুনিয়া হতে বিদায় নেন।
—(সহীহ মুসলিম : ২৬৬১)
Sunday, November 10, 2013
শান্তির পথ
→
History ( Itihas)
→ আশুরায়ে মুহাররাম করনীয় ও বর্জনীয়
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment