১| তারাবী অর্থ আরাম করা,বিশ্রাম করা,ধীরে ধীরে। বর্তমানে মুসলিম সমাজে রামাযানে ইশার সলাতের পর রাতের সলাতটি 'তারাবী' সলাত নামেই বিশেষভাবে পরিচিত। পবিত্র কুর'আন ও হাদীসের কোথাও এই তারাবীহ শব্দটির উল্লেখ নেই। হাদীসে এ সলাতকে صلو ة الليل (সালাতুল লাইল), رمضان قيام (কিয়ামে রামাযান),قيام الليل (কিয়ামুল লাইল) ও তাহাজ্জুদ নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহর পবিত্র বানীঃ
২। তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবিদের এমন কতক লোকও আছে যারা দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে, তারা রাত্রিকালে আল্লা-হর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং তারা সেজদাহ করে থাকে।
—(সূরা আল-ইমরান : ১১৩)
৩। আর রাতের কিছু অংশে তার জন্য সাজদাহয় অবনত হও,আর রাতের দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর মহিমা বর্ণনা কর।
—(সূরা দাহর : ২৬)
৪। যে রাত্রির বিভিন্ন প্রহরে সাজদাহ ও দন্ডায়মান অবস্থায় বিনয় ও শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রকাশ করে,আখিরাতকে ভয় করে,আর তার রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে? বলঃ যারা জানে আর যারা জানেনা তারা কি সমান? বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।
—(সূরা যূমার : ৯)
৫। তারা রাত্রিকালে খুব কমই শয়ন করত। আর তারা রাত্রি শেষ প্রহরে ক্ষমা প্রার্থনা করত।
—(সূরা যারিয়াত : ১৭-১৮)
হাদীসঃ
৬। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ
একদা রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীর রাতে বের হয়ে মাসজিদে সলাত আদায় করেন, কিছুসংখ্যক পুরুষ তাঁর পিছনে সলাত আদায় করে। সকালে লোকেরা সম্পর্কে আলোচনা করে,ফলে লোকেরা অধিক সংখ্যায় সমবেত হয়। তিনি সলাত আদায় করেন এবং লোকেরা তাঁর সংগে সলাত আদায় করে।সকালে তারা এ বিষয় আলাপ-আলোচনা করে। তৃতীয় রাতে মাসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। এরপর রসূলুল্ল-হ (সাঃ) মসজিদ থেকে বের হয়ে সলাত আদায় করেন ও লোকেরা তাঁর সংগে সলাত আদায় করে। চতুর্থ রাতে মাসজিদে মুসল্লীর সংকুলান হল না, কিন্তু তিনি রাতে আর বের না হয়ে ফাজরের সলাতে বেরিয়ে এলেন এবং সলাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাশাহহুদ পাঠ করলেন। এরপর বললেনঃ
'আম্মা বাদ' শোন! তোমাদের (গতরাতের) অবস্থান আমার অজানা ছিলনা, কিন্তু আমি এই সলাত তোমাদের উপর ফারয্ হয়ে যাবার আশংকা করেছি (তাই বের হইনি)। কেননা তোমরা তাআদায় করায় অপারগ হয়ে পড়তে। রাসুলাল্লাহ (সাঃ) ৃমৃত্যু হয়ে যায়,আর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায়।
—(বুখারী : ১৮৮০)
৭। আবূ হুরাইরা (রাঃ) আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলাল্লাহ (সাঃ) বলেন— যে ব্যক্তি রামাযান মাসের রাতে ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় সলাত আদায় করবে তার পূর্ববর্তী পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
—(বুখারী : ১৮৭৭)
৮। আবূ সালামা ইব্ন আব্দুর রহমান (রাঃ), আয়িশাহ্ (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলেনঃ রামাযানে রাসুলাল্লাহ (সাঃ)-এর রাতের সলাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেনঃ রসূলুল্ল-হ (সাঃ) রমাযান মাসে এবং রামাযান মাস ছাড়াও (অন্যান্য মাসে রাতের সলাত) এগার রাক'আত র অধিক সলাত করতেন না। চার রাক'আত সলাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই। তারপর চার রাক'আত সলাত আদায় করতেন, তারপর তিন রাকআত সলাত আদায় করতেন। তিনি বলেন, তখন আমি জিজ্ঞেস করলামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ্ আপনার বিতর দায়ের আগে কি আপনি নিদ্রা যান? তিনি বললেনঃ হে আয়িশাহ্! উভয় চোখ তোহ ঘুমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায়না।
—(বুখারী : ১০৭৬; মুসলিম : ১৫৯৩)
৯। আবূ সালাম (রাঃ) বলেন, আমি আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর রাতের সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ তের রাক'আত সলাত আদায় করতেন। আট রাক'আত সলাত আদায় করতেন এবং যখন রুকূ ইচ্ছা করতেন তখন উঠে দাঁড়িয়ে রুকূ করতেন, তারপর আযান ও ইক্বামাতের মাঝে দু'রাক'আত সলাত আদায় করতেন।
—( মুসলিম : ১৫৯৪)
১০। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ রাতের বেলা রাসুলাল্লাহ (সাঃ)-এর সলাত ছিল দশ রাক'আত, এক রাক'আত দিয়ে বিতর আদায় করতেন। আর ফাজরের দু'রাক'আতও (সুন্নাত) আদায় করতেন। এই হল তের রাক'আত।
—(মুসলিম : ১৫৯৭)
১১। যায়িদ ইব্ন খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) বলেন— (আমি স্থির করলাম) আজ রাতে আমি অবশ্যই রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ রাখব। তিনি প্রথমে সংক্ষেপে দু'রাক'আত সলাত আদায় করলেন। তারপর দু'রাক'আত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ দু'রাক'আত সলাত আদায় করলেন। তারপর দু'রাক'আত সলাত আদায় করলেন, যা তার পূর্ববর্তী রাক'আত এর চেয়ে কম দীর্ঘ। তারপর বিতর আদায় করলেন। এই হল মোট তের রাক'আত।
—(মুসলিম : ১৬৭৮)
১২। মাসরুক (রাঃ) বলেন, আমি আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর রাতের সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন- ফাজরের দু'রাক'আত (সুন্নাত) ব্যতীত সাত বা নয় কিংবা এগার রাক'আত।
—(বুখারী : ১০৬৮)
১৩। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন— নাবী মুহাম্মদ (সাঃ) রাতের বেলা তের রাক'আত সলাত আদায় করতেন, বিতর এবং ফাজরের দু'রাক'আত (সুন্নাত)-ও এর অন্তর্ভুক্ত।
—(বুখারী : ১০৬৯)
১৪। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন— একদা রামাযান এর রাতে রসূলুল্ল-হ (সাঃ) স্বীয় গৃহ থেকে বের হয়ে দেখতে পান যে, মাসজিদের এক পাশে কিছু লোক সলাত আদায় করছে। তিনি (সাঃ) জিজ্ঞাস করেনঃ এরা কি করছে? তাঁকে বলা হয়ঃ এদের কুর'আন মুখস্থ না থাকায় তারা উবাই ইবন কা'বের (রাঃ) পিছনে (মুক্তাদী হিসেবে) সালাতুল লাইল (তারাবি) আদায় করছে । নাবী কারিম (সাঃ) বলেন, তারা ঠিক করছে।
—(আবূ দাউদ : ১৩৭৭)
১৫। সায়িব ইব্ন ইয়াযিদ (রাঃ) বলেছেনঃ উমার ইব্ন খাত্তাব (রাঃ),উবাই ইব্ন কা'ব এবং তামীমদারী (রাঃ)-কে লোকজন এর (মুসল্লীগণের) জন্য ১১ রাক'আত (তারাবীহ) কায়েম করতে (পড়াতে) নির্দেশ দিয়েছিলেন।
—[মুয়াত্তা ইমাম মালিক (র)/১ম খন্ড, ১৭১ পৃষ্ঠা]
#[ বিতর ৩ রাক'আত আদায় করলে তারাবী ৮ রাক'আত আর বিতর ১ রাক'আত আদায় করলে তারাবী ১১ রাক'আত আদায় করতে হবে।]
→ উপরোক্ত সহীহ হাদীসের বর্ণনাগুলির সার সংক্ষেপ হল, রামাযান মাস বা রামাযান ছাড়া অন্য মাসে রাসুলাল্লাহ (সাঃ)-এর রাতের নাফল সলাত ছিল ৮ বা ১০ রাক'আত, যা খলিফা উমার (রাঃ) নির্দেশও পাওয়া গেল ৮/১০ রাক'আত। ২০ রাক'আত তারাবী সালাতের বর্ণনা কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়নি এবং খলিফা উমার (রাঃ) এর নির্দেশ এর কথাও বলা হয় নি। এই ২০ রাক'আত তারাবীহ সম্পর্কে কোন কোন মুহাদ্দিস যঈফ বা দুর্বল বলেছেন [মিশকাত শরীফ, তারাবী অধ্যায়, ৩য় খন্ড, লেখক- নূর মুহাম্মাদ আযমী]।
তা ছাড়াও গুত্বপূর্ণ তারাবী-র সলাত ২০ রাক'আত এর বর্ণনা সিহাহ সিত্তাহ অর্থাৎ বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইব্ন মাজাহ,আবূ দাউদ এ সকল হাদীসে উল্লেখ নাই। খলিফা উমার (রাঃ) এর সুস্পষ্ট নির্দেশ এর হাদীসে ১১ রাক'আত বিতরসহ তারাবী সলাতের কথা পাওয়া যায় যা রাসূল (সাঃ) এর আমলের সাথেও মিল আছে। ১১ রাক'আত থেকে বিতর ১ রাক'আত আদায় করলে তারাবী হবে ১০ রাক'আত আর বিতর ৩ রাক'আত আদায় করলে তারাবী হবে ৮ রাক'আত। সে কারণে ৮ বা ১০ রাক'আত তারাবীহ সলাত আদায় করা উত্তম ও দলীল সম্মত। আর সবকিছু সর্বঅজ্ঞ আল্লাহই জানেন।
Thursday, November 7, 2013
শান্তির পথ
→
Salah(Namaz)
→ রামাযান মাসে রাতের সলাত বা তারাবীহ সলাত সম্পর্কে
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment