Wednesday, November 13, 2013

শহীদগণ কি জীবিত থাকেন? তাদের জীবন কেমন? তারা কি দুনিয়ায় প্রত্যাবর্তন করতে পারে?

• আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে যারা কাফিরদের হাতে নিহত হয় তারা শহীদ । জিহাদ করার পর যারা জীবিত থাকে তাদেরকে গাযী বলা হয়। দুনিয়াবি দৃষ্টিকোণ থেকে শহীদরা মৃত। সেহেতু তাদের স্ত্রীগন বিধবা হয়। সন্তানরা ইয়াতিম হয়। তাদের সম্পদ বন্টন করা হয়। মানুষ শহীদকে দাফন করে। অতএব জানা গেল যে, দুনিয়াবি দৃষ্টিকো থেকে শহীদরা মৃত। কিন্তু আল্লাহর কাছে জীবিত থাকেন।

১। শহীদের সম্পর্কে আল্লাহ্‌ বলেনঃ

" বরং তারা (শহীদরা) তাদের রবের কাছে জীবিত এবং রিযিক প্রাপ্ত, তারা জীবিত কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পারনা।"
—( সূরা নিসা : ১৬৯ )

২। শহীদ দুনিয়ায় ফিরে আস্তে পারেনা। রসূলুল্ল-হ (সাঃ) বলেছেন—
একবার আল্লাহ্‌ শহীদগণ-কে জিজ্ঞেস করেন যে, তোমরা কি চাও? উত্তরে শহীদগণ বলেনঃ জান্নাতের মধ্যে যেখানে ইচ্ছা সেখানে বিচরণ, খাওয়া-পান করার আমাদের ইখতিয়ার রয়েছে। এর চেয়ে বেশি কি চাইবে হে আল্লাহ্‌! আল্লাহ্‌ ২য় ও ৩য় বার জিজ্ঞেস করলেনঃ (তোমরা কি চাও?) শহীদগণ যখন দেখলেন যে, না চেয়ে উপায় নেই, তখন আল্লাহর কাছে আবেদন করেনঃ হে আমাদের রব! আপনি আমাদের রূহ আমদের শরীরে ফিরিয়ে দিন যাতে আমরা দুনিয়ায় ফিরে গিয়ে আপনার রাস্তায় জিহাদ করে পুনরায় শহীদ হতে পারি। শহীদদের চাহিদা না থাকায় আল্লাহ আর প্রশ্ন করলেন না।
—( মুসলিম : ৪৭৩২)

৩। রাসুলাল্লাহ (সাঃ) বলেন—
শহীদ শাহাদাত বরণ করার সময় কোনো কষ্ট অনুভব করেনা এতটুকু ছাড়া, যেমন তোমাদের কেহকে পিপড়ায় কামড় দিলে তোমরা অনুভব কর।
—( ইব্ন মাজাহ : ২৮০২- আবূ হুরাইরা)

৪। ঋণ ছাড়া শহীদের সকল পাপই ক্ষমা করে দেয়া হয়।
—[ মুসলিম : ৪৭৩০-আ,ই,আস(রাঃ)]

Sunday, November 10, 2013

আশুরায়ে মুহাররাম করনীয় ও বর্জনীয়

✔প্রসংগ কথাঃ মুসলিম সমাজে আশুরায়ে মুহাররাম একটি সুপরিচিত বিষয়। বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায় এর কাছে বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো আশুরায়ে মুহাররাম। তাই দেখা যায় অনেকেই এ দিনটিকে শুধুমাত্র শিয়াদের বিশেষ দিন মনে করে থাকেন, আবার কেউ শিয়াদের সংস্পর্শে থাকার কারণে তাদের ঐসব বিড়াল তাপশ কর্মসূচীতেও যোগ দিয়ে থাকেন। আসলে বিষয়টি কি শুধু শিয়াদের জন্যই নির্দিষ্ট না আশুরায়ে মুহাররামে সুন্নী মুসলমানদের জন্য কিছু রয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে বলব । হ‍্যাঁ অবশ্যই সুন্নী মুসলিমজাতির জন্যও কিছু করণীয় রয়েছে, তবে শিয়াদের দীন-ধর্মে যা প্রমাণিত তাই হলো সুন্নী মুসলমানদের করণীয় তাই হলো সুন্নী মুসলমানদের করণীয়, আসুন আমরা সংক্ষেপে আশুরায়ে মুহাররাম করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় সমূহ জেনে নেই।

✔ পবিত্র মুহাররাম মাসঃ
বছরে মাসের সংখ্যা ও গণনা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্‌ তা'আলা পবিত্র কুর'আনে বলেন—

" নিশ্চই আল্লা-হর বিধান ও গণনায় মাস বারটি, আর তা আসমান সমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তম্মধ্যে চারটি মাস হারাম বা সম্মানিত। এটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান, সূতরাং তোমরা এর মধ্যে নিজেদের উপর যুলুম অত্যাচার করনা।"
—( সূরা তাওবা : ৩৬ )

সাহাবী আবূ বাকরাহ (রাঃ) নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন তিনি (সাঃ) বলেন—
"বার মাসে এক বছর, তম্মধ্যে চারটি হারাম বা সম্মানিত মাস- যুলকাদাহ, যুলহিজ্জা ও মুহাররাম একত্রে তিন মাস এবং রজব মাস।"
—( সহীহ-উল বুখারী : ২৯৫৮ )

তাই মুহাররাম মাসটি হলো এমন এক সম্মানিত মর্যাদাশালী মাস যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ।

✔ আশুরা কি?ঃ
আশুরা শব্দটির বিশ্লেষণ নিয়ে ভাষাবিদগন বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। অধিকাংশের নিকট মুহাররাম মাসের দশম তারিখেই হলো আশুরার দিন। ইহা আরবী শব্দ (عشر) আশারা হরে নির্গত, যার অর্থ হলো দশ। অতএব মুহাররাম মাসের দশম তারিখে রোযা রাখার নামই হলো আশুরার রোযা।
(দ্রঃ মির'আতুল মাফাতিহ ৭/৪৫ পৃষ্ঠা)

আশুরায়ে মুহাররাম-এর রোযা শুধু উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য নয় বরং ইহা পূর্ববর্তী যুগেও প্রচলিত ছিল।

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন—
একদা রসূলুল্ল-হ (সাঃ) এর নিকট আশুরার দিবস সম্পর্কে আলোচনা করা হলে তিনি (সাঃ) বলেন— এদিনে জাহেলী যুগের লোকেরা রোযা রাখতো, অতএব যে (রোযা) রাখতে চায় রাখবে আর যে ছাড়তে চায় ছাড়বে।
—( সহীহ মুসলিম : ২৬৪২ )

সহীহ মুসলিম এর অন্য বর্ণনায় এসেছে আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন— জাহেলী যুগে মক্কায় কুরাইশ বংশের লোকেরা আশুরার রোযা রাখত এবং রসূলুল্ল-হ (সাঃ)-ও আশুরায় রোজা রাখতেন।
—( সহীহ মুসলিম : ২৬৩২ )

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত
তিনি বলেনঃ নবী (সাঃ) যখন মদীনায় আগমন করলেন তখন দেখলেন যে ইয়াহুদ সম্প্রদায় দশই মুহাররাম আশুরার রোযা রাখছে। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ একি বিষয়? তারা বলল, এ হলো পবিত্র দিন, যে দিনে আল্লাহ্‌ তা'আলা বানী ইসরাইলকে তাদের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন, ফলে মুসা (আঃ) সে দিনটি শুকরিয়া স্বরূপ রোযা রেখেছেন (আমারও তার অনুসরণ কররাখছি)। নবী (সাঃ) বললেনঃ আমি তোমাদের চেয়ে মূসা (আঃ) এর মত রোযা রাখার বেশী অধিকার রাখি, অতঃপর তিনি রোযা রাখেন এবং অন্যদের রোযা রাখার নির্দেশ দেন।
—( সহীহুল বুখারী : ২০০৪, সহীহ মুসলিম : ১১৩০ )

এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় বর্ধিত অংশ বলা হয়েছে যে, আশুরা এমন একটি দিন, যে দিনে নূহ (আঃ) এর কিশতী জুদী পর্বতে অবতরণ করে ফলে তিনি শুকরিয়া স্বরূপ ঐ দিনটি রোযা রাখেন। অতএব প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী নবী ও উম্মাতের মাঝেও আশুরায়ে মুহাররাম এর রোযা রাখার ইবাদত চালু ছিল।

✔ আশুরায়ে মুহাররাম-এ করণীয়ঃ
আশুরায় মুহাররাম সম্পর্কে আমার পরিচিত হলাম।এখন জানা দরকার কুর'আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে আমাদের করণীয় কি?
বিভিন্ন পেপার পত্রিকা ও মুসলিম বিশ্বের বাস্তব অবস্থার প্রতি নজর দিলে দেখা যায় মানুষ চার ভাগে বিভক্ত

√ ১. চরমপন্থি শিয়া সম্প্রদায়:
যাঁদের কাছে এ দিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মূলতঃ তাদের ঐসব কর্মকান্ড মুহাম্মাদ (সাঃ) এর দীন-ধর্মে ভিক্তিহীন।

√ ২. যারা এদিন সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে গাফেল উদাসীন।

√ ৩. যারা এদিনকে কিছুটা গুরুত্ব দেয় তবে সীমাতিক্রম করে মিলাদ মাহফিল খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি কর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে।

√ ৪. যারা আল-কুর'আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে এদিনটি যথাযথ মূল্যায়ন করে থাকেন। এরাই হল "হক"। ইহাই প্রতিটি উম্মাতের মুহাম্মাদীর উচিত। কুর'আন ও সহীহ হাদীসের আলোকে অন্য মাস বা দিনের এর ন্যায় দশই মুহাররামে একই ইবাদত, তবে বিশেষ ইবাদত হলো রোযা রাখা।

✔ আশুরায় রোযার ফযীলতঃ
আশুরার রোযার একটি বড় ফযীলতপূর্ণ রোযা, এর বদৌলতে শধু রোযারই ফযীলত পাওয়া যায় না বরং পূর্বের এক বছরের অপরাধ মোচন হয়ে যায়। নবী (সাঃ) বলেনঃ আমি আল্লাহ তা'আলার কাছে আশাবাদী যে, আশুরার রোযার বিনিময় তিনি পূর্বের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ্ মোচন করে দিবেন।
—( সহীহ মুসলিম : ১৯৭৬ )

✔ আশুরার রোযার হুকুম ও সংখ্যাঃ
পূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, ইসলাম এর পূর্ব যূগ হতেই এ রোযার প্রচলন রয়েছে, অতঃপর নবী (সাঃ) এর মাধ্যমে তা ইসলামের ইবাদত হিসেবে গন্য হয়। রামাযান এর রোযা ফরয হওয়ার পর ইহা সকলের মতে সুন্নাত। কিন্তু রামাযানের রোযা ফরয হওয়ার পূর্বে তার হুকুম সম্পর্কে দিদ্বানগন ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন, কেউ ওয়াজিব বলেছেন আবার কেউ সুন্নাত বলেছেন, তবে অনেকেই ওয়াজিব বলেছেন, কারণ নবী (সাঃ) নিজে রোযা রেখেছেন এবং সাহাবীদের রোযা রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ রসূলুল্ল-হ (সাঃ) যখন মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করে গেলেন তখন তিনি নিজে রোযা রাখলেন এবং অন্যদের রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর যখন রামাযানের রোযা ফরয হলো তখন তিনি বললেনঃ যার ইচ্ছা হয় আশুরার রোযা রাখবে আর যার ইচ্ছা হয়, না রাখবে।
—(সহীহ মুসলিম : ২৬৩২)
নবী (সাঃ) সর্বপ্রথম আশুরার রোযা হিসেবে মুহাররাম মাসের দশ তারিখে শুধু একটি রোযা রাখেন এবং সে দিনটির ফযীলত বর্ণনা করেন। অতঃপর দশম হিজরীতে নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে ইয়াহুদ সম্প্রদায় এ দিনটিকে খুব মর্যাদা দেয় এবং সে দিনটিতে রোযা রাখে তখন নবী (সাঃ) বলেনঃ যদি আমি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে নবম তারিখ সহ দু'টি রোযা রাখব। কিন্তু আগামী বছর আসার পূর্বেই তিনি দুনিয়া হতে বিদায় নেন।
—(সহীহ মুসলিম : ২৬৬১)

Thursday, November 7, 2013

রামাযান মাসে রাতের সলাত বা তারাবীহ সলাত সম্পর্কে

১| তারাবী অর্থ আরাম করা,বিশ্রাম করা,ধীরে ধীরে। বর্তমানে মুসলিম সমাজে রামাযানে ইশার সলাতের পর রাতের সলাতটি 'তারাবী' সলাত নামেই বিশেষভাবে পরিচিত। পবিত্র কুর'আন ও হাদীসের কোথাও এই তারাবীহ শব্দটির উল্লেখ নেই। হাদীসে এ সলাতকে صلو ة الليل (সালাতুল লাইল), رمضان قيام (কিয়ামে রামাযান),قيام الليل (কিয়ামুল লাইল) ও তাহাজ্জুদ নামে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহর পবিত্র বানীঃ

২। তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবিদের এমন কতক লোকও আছে যারা দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত আছে, তারা রাত্রিকালে আল্লা-হর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং তারা সেজদাহ করে থাকে।
—(সূরা আল-ইমরান : ১১৩)

৩। আর রাতের কিছু অংশে তার জন্য সাজদাহয় অবনত হও,আর রাতের দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর মহিমা বর্ণনা কর।
—(সূরা দাহর : ২৬)

৪। যে রাত্রির বিভিন্ন প্রহরে সাজদাহ ও দন্ডায়মান অবস্থায় বিনয় ও শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রকাশ করে,আখিরাতকে ভয় করে,আর তার রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে? বলঃ যারা জানে আর যারা জানেনা তারা কি সমান? বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।
—(সূরা যূমার : ৯)

৫। তারা রাত্রিকালে খুব কমই শয়ন করত। আর তারা রাত্রি শেষ প্রহরে ক্ষমা প্রার্থনা করত।
—(সূরা যারিয়াত : ১৭-১৮)

হাদীসঃ

৬। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ
একদা রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীর রাতে বের হয়ে মাসজিদে সলাত আদায় করেন, কিছুসংখ্যক পুরুষ তাঁর পিছনে সলাত আদায় করে। সকালে লোকেরা সম্পর্কে আলোচনা করে,ফলে লোকেরা অধিক সংখ্যায় সমবেত হয়। তিনি সলাত আদায় করেন এবং লোকেরা তাঁর সংগে সলাত আদায় করে।সকালে তারা এ বিষয় আলাপ-আলোচনা করে। তৃতীয় রাতে মাসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। এরপর রসূলুল্ল-হ (সাঃ) মসজিদ থেকে বের হয়ে সলাত আদায় করেন ও লোকেরা তাঁর সংগে সলাত আদায় করে। চতুর্থ রাতে মাসজিদে মুসল্লীর সংকুলান হল না, কিন্তু তিনি রাতে আর বের না হয়ে ফাজরের সলাতে বেরিয়ে এলেন এবং সলাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাশাহহুদ পাঠ করলেন। এরপর বললেনঃ
'আম্মা বাদ' শোন! তোমাদের (গতরাতের) অবস্থান আমার অজানা ছিলনা, কিন্তু আমি এই সলাত তোমাদের উপর ফারয্ হয়ে যাবার আশংকা করেছি (তাই বের হইনি)। কেননা তোমরা তাআদায় করায় অপারগ হয়ে পড়তে। রাসুলাল্লাহ (সাঃ) ৃমৃত্যু হয়ে যায়,আর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায়।
—(বুখারী : ১৮৮০)

৭। আবূ হুরাইরা (রাঃ) আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলাল্লাহ (সাঃ) বলেন— যে ব্যক্তি রামাযান মাসের রাতে ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় সলাত আদায় করবে তার পূর্ববর্তী পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
—(বুখারী : ১৮৭৭)

৮। আবূ সালামা ইব্ন আব্দুর রহমান (রাঃ), আয়িশাহ্ (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলেনঃ রামাযানে রাসুলাল্লাহ (সাঃ)-এর রাতের সলাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেনঃ রসূলুল্ল-হ (সাঃ) রমাযান মাসে এবং রামাযান মাস ছাড়াও (অন্যান্য মাসে রাতের সলাত) এগার রাক'আত র অধিক সলাত করতেন না। চার রাক'আত সলাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই। তারপর চার রাক'আত সলাত আদায় করতেন, তারপর তিন রাকআত সলাত আদায় করতেন। তিনি বলেন, তখন আমি জিজ্ঞেস করলামঃ ইয়া রসূলুল্লাহ্ আপনার বিতর দায়ের আগে কি আপনি নিদ্রা যান? তিনি বললেনঃ হে আয়িশাহ্! উভয় চোখ তোহ ঘুমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায়না।
—(বুখারী : ১০৭৬; মুসলিম : ১৫৯৩)

৯। আবূ সালাম (রাঃ) বলেন, আমি আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর রাতের সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ তের রাক'আত সলাত আদায় করতেন। আট রাক'আত সলাত আদায় করতেন এবং যখন রুকূ ইচ্ছা করতেন তখন উঠে দাঁড়িয়ে রুকূ করতেন, তারপর আযান ও ইক্বামাতের মাঝে দু'রাক'আত সলাত আদায় করতেন।
—( মুসলিম : ১৫৯৪)

১০। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেনঃ রাতের বেলা রাসুলাল্লাহ (সাঃ)-এর সলাত ছিল দশ রাক'আত, এক রাক'আত দিয়ে বিতর আদায় করতেন। আর ফাজরের দু'রাক'আতও (সুন্নাত) আদায় করতেন। এই হল তের রাক'আত।
—(মুসলিম : ১৫৯৭)

১১। যায়িদ ইব্ন খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) বলেন— (আমি স্থির করলাম) আজ রাতে আমি অবশ্যই রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ রাখব। তিনি প্রথমে সংক্ষেপে দু'রাক'আত সলাত আদায় করলেন। তারপর দু'রাক'আত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ দু'রাক'আত সলাত আদায় করলেন। তারপর দু'রাক'আত সলাত আদায় করলেন, যা তার পূর্ববর্তী রাক'আত এর চেয়ে কম দীর্ঘ। তারপর বিতর আদায় করলেন। এই হল মোট তের রাক'আত।
—(মুসলিম : ১৬৭৮)

১২। মাসরুক (রাঃ) বলেন, আমি আয়িশাহ্ (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর রাতের সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন- ফাজরের দু'রাক'আত (সুন্নাত) ব্যতীত সাত বা নয় কিংবা এগার রাক'আত।
—(বুখারী : ১০৬৮)

১৩। আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন— নাবী মুহাম্মদ (সাঃ) রাতের বেলা তের রাক'আত সলাত আদায় করতেন, বিতর এবং ফাজরের দু'রাক'আত (সুন্নাত)-ও এর অন্তর্ভুক্ত।
—(বুখারী : ১০৬৯)

১৪। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন— একদা রামাযান এর রাতে রসূলুল্ল-হ (সাঃ) স্বীয় গৃহ থেকে বের হয়ে দেখতে পান যে, মাসজিদের এক পাশে কিছু লোক সলাত আদায় করছে। তিনি (সাঃ) জিজ্ঞাস করেনঃ এরা কি করছে? তাঁকে বলা হয়ঃ এদের কুর'আন মুখস্থ না থাকায় তারা উবাই ইবন কা'বের (রাঃ) পিছনে (মুক্তাদী হিসেবে) সালাতুল লাইল (তারাবি) আদায় করছে । নাবী কারিম (সাঃ) বলেন, তারা ঠিক করছে।
—(আবূ দাউদ : ১৩৭৭)

১৫। সায়িব ইব্ন ইয়াযিদ (রাঃ) বলেছেনঃ উমার ইব্ন খাত্তাব (রাঃ),উবাই ইব্ন কা'ব এবং তামীমদারী (রাঃ)-কে লোকজন এর (মুসল্লীগণের) জন্য ১১ রাক'আত (তারাবীহ) কায়েম করতে (পড়াতে) নির্দেশ দিয়েছিলেন।
—[মুয়াত্তা ইমাম মালিক (র)/১ম খন্ড, ১৭১ পৃষ্ঠা]
#[ বিতর ৩ রাক'আত আদায় করলে তারাবী ৮ রাক'আত আর বিতর ১ রাক'আত আদায় করলে তারাবী ১১ রাক'আত আদায় করতে হবে।]

→ উপরোক্ত সহীহ হাদীসের বর্ণনাগুলির সার সংক্ষেপ হল, রামাযান মাস বা রামাযান ছাড়া অন্য মাসে রাসুলাল্লাহ (সাঃ)-এর রাতের নাফল সলাত ছিল ৮ বা ১০ রাক'আত, যা খলিফা উমার (রাঃ) নির্দেশও পাওয়া গেল ৮/১০ রাক'আত। ২০ রাক'আত তারাবী সালাতের বর্ণনা কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়নি এবং খলিফা উমার (রাঃ) এর নির্দেশ এর কথাও বলা হয় নি। এই ২০ রাক'আত তারাবীহ সম্পর্কে কোন কোন মুহাদ্দিস যঈফ বা দুর্বল বলেছেন [মিশকাত শরীফ, তারাবী অধ্যায়, ৩য় খন্ড, লেখক- নূর মুহাম্মাদ আযমী]।
তা ছাড়াও গুত্বপূর্ণ তারাবী-র সলাত ২০ রাক'আত এর বর্ণনা সিহাহ সিত্তাহ অর্থাৎ বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, ইব্ন মাজাহ,আবূ দাউদ এ সকল হাদীসে উল্লেখ নাই। খলিফা উমার (রাঃ) এর সুস্পষ্ট নির্দেশ এর হাদীসে ১১ রাক'আত বিতরসহ তারাবী সলাতের কথা পাওয়া যায় যা রাসূল (সাঃ) এর আমলের সাথেও মিল আছে। ১১ রাক'আত থেকে বিতর ১ রাক'আত আদায় করলে তারাবী হবে ১০ রাক'আত আর বিতর ৩ রাক'আত আদায় করলে তারাবী হবে ৮ রাক'আত। সে কারণে ৮ বা ১০ রাক'আত তারাবীহ সলাত আদায় করা উত্তম ও দলীল সম্মত। আর সবকিছু সর্বঅজ্ঞ আল্লাহই জানেন।

Monday, September 9, 2013

নিয়্যাত সম্পর্কে কয়েক মুসলমানদের ভুল ধারনা

নিয়্যাত আরবি শব্দ। এর অর্থ মনে মনে সংকল্প করা।
আল্লামা ইবনুল হুমাম হানাফী (র.) বলেন, হাদীসের কিছু হাফিয বলেছেন,রসূলুল্ল-হ (সাঃ) থেকে সহীহ এবং যঈফ কোন সানাদেও এ কথা প্রমাণিত নেই যে, তিনি সলাত শুরু করার সময় বলতেন যে, আমি এরূপ সলাত আদায় করছি। কোন সাহাবী এবং তাবিঈ থেকেও প্রমাণিত নেই। বরং এ কথা বর্ণিত আছে যে, তিনি (সাঃ) যখন সলাত শুরু করতেন তখন কেবল তাকবীর দিতেন। তাই মুখে নিয়্যাত পড়া বিদ'আত।
—( ফতহুল কাদীর ১ম খন্ড ১০৮ পৃষ্ঠা, কাবীরী ২৫২ পৃষ্ঠা)
আল্লামা শামী হানাফী (রহ.) বলেন, হিলয়্যাহতে এতটা বাড়তি আছে যে, চার ঈমাম থেকেও মখে নিয়্যাত পড়া প্রমাণিত নেই।
—( শামী ১ম খন্ড ৩৮৬ পৃষ্ঠা)
[সুত্রঃ আইনী তুহফা সলাতে মুস্তফা ১০৩ পৃষ্ঠ]

শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহ.) তার "সিফাতু সালাতিন নাবী" গ্রন্থে এ মর্মে যা উল্লেখ করেছেনঃ "সলাত আদায়কারী যে সলাতের জন্য দাঁড়াবে মনে মনে তার সংকল্প করা ও ক্বিবলা নির্ধারণ করা আবশ্যক, যেমন যুহর কিংবা আসরের সলাত,অনুরূপে উক্ত দু'ওয়াক্তের সুন্নাত সলাতসমূহ, আর সেটা হচ্ছে শর্ত রুক্ণ।
সলাতে নিয়্যাত মুখে উচ্চারণ সুন্নাতের পরিপন্থী। অর্থাৎ বিদ'আত। চার ঈমামের কোন অন্ধ অনুসারীও মুখে কোন গদ বাধা শব্দ উচ্চারণ করতে বলেননি।
-( রসূলুল্ল-হ (সাঃ)- এর নামায- নাসিরুদ্দিন আলবানী ৫৩ পৃষ্ঠা )

Thursday, August 15, 2013

ইসলামে বক্রতার সৃষ্টি বা চার ইমাম এবং সুন্নাহ সম্বন্ধে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি

সময়ের সাথে সাথে মুসলিমদের মাঝে ফিক্‌হের চারটি ধারা জন্ম নেয় এবং বিস্তার লাভ করে ৷ আজ পর্যন্ত ঐ চারটি মাযহাবের প্রচুর প্রভাব পরিলতি হয় ৷ এই মাযহাবগুলি হচ্ছেঃ

১) হনাফী মাযহাব – এই মাযহাবের সূত্রপাত ঘটে কুফায়, যেখানে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) এবংআলী ইবন আবু তালিব (রা.) এর মত সাহাবীরা বসবাস করতেন ৷ আবু হানিফা আল নু’মান ইবন সাবিতের (৮০ – ১৫০ হিজরী) নাম অনুসারে এই মাযহাব, হানাফী মাযহাব নামে পরিচিত ৷ ইসলামের ইতিহাসে তাঁকে সর্বকালের বৃহত্তম ফিক্‌হ শাস্ত্রবিদদের একজন বলে সবাই স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন ৷ আবু হানিফার সাথে তাঁর শিষ্য আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ আল হাসান এবং জাফর - এঁরা সবাই এই মাযহাবের গঠন ও বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখেন ৷ আধুনিক পাকিস্তান, ভারত, তুরস্ক, প্রাক্তন সাভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এবং পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে আজও হানাফী মাযহাব প্রাধান্য বিস্তার করে আছে ৷

২) মালিকী মাযহাব – এই মাযহাবের বিকাশ ঘটে নবীর (সা.) শহর মদীনায়, যেখানে তাঁর অনেক সাহাবী বসবাস করতেন ৷ এই মাযহাব মালিক বিন আনাসের (৯৫ – ১৭৯ হিজরী) নামানুসারে পরিচিত – যিনি হাদীসের একজন স্কলার ও ফিকাহশাস্ত্রবিদ ছিলেন ৷ এই মাযহাব দ্রুত উত্তর আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে যেখানে আজও এর প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়, উপরন্তু মুসলিম স্পেনেও এটাই ছিল প্রধান মাযহাব ৷

৩) শফিঈ মাযহাব- এই মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুহাম্মাদ ইবন ইদ্রিস আল শাফি’ঈ (১৫০ – ২০৪ হিজরী) – যাঁর নাম অনুসারে এই মাযহাবের নামকরণ হয়েছে ৷ মক্কার একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করা আল শাফি’ঈ মদীনায় গমন করেন ৷ তিনি ইরাকেও যান এবং আবু হানিফার ছাত্র মুহাম্মাদ আল হাসানেরসাথেও কথাবার্তা বলেন ৷ উসূল আল ফিক্‌হ বা ইসলামী আইনতত্ত্বের উপরে প্রথম পুস্তকের সংকলন ইমাম শাফি‘ঈই করেছিলেন ৷ এটা একটা বিশাল কাজ ছিল এবং এতে ইসলামে সুন্নাহর কর্তৃত্ব ও মর্যাদা স্পষ্ট করে নির্দেশিত হয়েছে ৷ আজকের দিনে মিশর, সিরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং অন্যান্য স্থানে শাফিঈ মাযহাবের প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয় ৷

৪) হাম্বলী মাযহাব – আহমাদ বিন হাম্বলের (১৬৪ – ২৪১ হিজরী) নামানুসারে এই মাযহাব পরিচিত ৷ ইমাম আহমাদ ছিলেন হাদীসের এক বিশাল পন্ডিত ব্যক্তি ৷ মুসনাদ আহ্‌মাদ নামে এক বিশাল গ্রন্থের তিনি ছিলেন প্রণেতা ৷ ফিকাহের ব্যাপারে তিনি তাঁর শিক্ষক ইমাম আল-শাফি’ঈ কর্তৃক গভীরভাবে প্রভাবিত হন ৷ আজকের দিনের সৌদী আরবে, হাম্বলী মাযহাবই হচ্ছে প্রধান ৷

সুন্নাহ ও হাদীসের গুরুত্ব সম্পর্কে স্কলারদের ধ্যান-ধারণা বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ ৷ কেননা কোন হাদীস যখন তাদের মাযহাবের মতের বিরুদ্ধে যায়, তখন তাদের অনুসারীরা সেই সব হাদীস অনুসরণ করার ব্যাপারে তীব্র বিরোধিতা করে থাকেন ৷ তারা ধরেই নেন যে, তাদের স্কলাররা নিশ্চয়ই হাদীসটি জানতেন এবং জেনে শুনে সঙ্গত কারণেই তারা হাদীসটির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন ৷

সুন্নাহ এবং হাদীস সম্বন্ধে চার ইমামের বক্তব্যের ভিতর থেকে আমরা নিম্নলিখিত বক্তব্যগুলো তুলে দিলাম:

ইবন আল মুবারকের বর্ণনায় এসেছে যে, ইমাম আবু হানিফা বলেন, “যদি আল্লাহর রাসূলের (সা.) কাছ থেকে কোন বর্ণনা আসে, তবে সেটাই হচ্ছে মস্তিষ্ক ও চক্ষু (অর্থাৎ সেই ব্যাপারের সবকিছু – সেখানে আর বিতর্ক করার কোন অবকাশ নেই)৷ যদি নবীর (সা.) সাহাবীদের কাছ থেকে বর্ণনা আসে, তবে তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্য থেকে আমরা (কোন একটি) বেছে নিই ৷”
আবু হানিফা বলেন, “আল্লাহ্‌র দ্বীন সম্পর্কে নিজের মতামতের ভিত্তিতে কথা বলার ব্যাপারে সাবধান থেকো ৷ তোমাদের অবশ্যই সুন্নাহর সাথে লেগে থাকা উচিত ৷ যে এর থেকে দূরে থাকে সেই পথভ্রষ্ট হল (সে সিরাতুল মুস্তাক্বীম থেকে সরে গেল) ৷”
তিনি আরো বলেন, “সুন্নাহ যদি না হতো, তাহলে আমরা কেউই কুর’আন বুঝতে সক্ষম হতাম না ৷” আরেকটি উপলক্ষে তিনি বলেন, “মানুষ ততদিন পর্যন্ত ভালোর মধ্যে থাকবে, যতদিন তারা হাদীস শিক্ষা ও অনুসন্ধান করতে থাকবে ৷ তারা যদি হাদীস ছাড়া জ্ঞানের অনুসন্ধান করে, তবে তারা পচে যাবে – কারোরই কোন কথা বলা উচিত নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত সে জানবে না যে, রাসূলের (সা.) আইন ঐ কথাটির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ৷”
ইমাম আবু হানিফাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “আপনি যদি এমন কোন বক্তব্য দেন, যা আল্লাহর কিতাবের সাথে বিরোধপূর্ণ হয় (তাহলে কি করা হবে) ?” তিনি উত্তর দেন, “আল্লাহর কিতাবের পক্ষ অবলম্বন করে আমার বক্তব্য ত্যাগ করবে ৷” তারপর বলা হলো, “যদি ধরুন তা রাসূল (সা.)-এঁর কোন বর্ণনার বিরোধিতা করে?” তিনি বলেন, “রাসূলের (সা.) বর্ণনার পক্ষাবলম্বণ করে আমার বর্ণনা ত্যাগ করবে ৷” আবু হানিফার ছাত্র মুহাম্মাদ ইবন আল হাসানের সূত্রেও উপরের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে ৷ আরো বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি বলেন, “হাদীস যদি সহীহ হয় তবে সেটাই আমার মত (মাযহাব) ৷”
উসমান ইবন ওমর-এর বর্ণনায় এসেছে যে, এক ব্যক্তি একবার ইমাম মালিকের কাছে এলো এবং তাঁকে একটি প্রশ্ন করলো ৷ ইমাম মালিক জবাবে বললেন, “আল্লাহর রাসূল (সা.) এমন এমন বলেছিলেন ৷”লোকটি জিজ্ঞেস করলো, “আপনার মত কি?” মালিক তখন কেবল কুর’আনের একটি আয়াত যেখানে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে সেটি দিয়ে তার জবাব দিলেন-

“সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা সতর্ক হয়ে যাক যে তাদের উপর বিপর্যয় নেমে আসবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তি নেমে আসবে ৷” (সূরা নূর, ২৪:৬৩)

ইমাম মালিক থেকে আরো উদ্ধৃত করা হয় যে তিনি বলেন, “আমি কেবলই একজন মানুষ ৷ আমি ভুল করি এবং আমি অন্যসময় সঠিকও হই ৷ আমার মতামত পরীক্ষা করে দেখ ৷ আমার মতের যা কিছু আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাহর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, তা গ্রহণ কর, আর যা কিছু আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাহর সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ তা বর্জন কর ৷”
আল রাবীর বর্ণনায় এসেছে যে, ইমাম আস-শাফি‘ঈ বলেন, “আমার বইয়ে যদি তোমরা এমন কিছু পাও, যেটা আল্লাহর রাসূলের (সা.) চেয়ে ভিন্ন হয়, তবে সুন্নাহ অনুযায়ী কথা বলো এবং আমি যা বলেছি সেটা বর্জন কর ৷” আস-শাফিঈ আরো বলেন, “যদি হাদীসটি সহীহ হয় তবে সেটাই আমার মত ৷ ”
আল-হুমাইদি বলেন যে, আস-শাফি‘ঈ একদিন একটি হাদীস বর্ণনা করলেন এবং আল হুমাইদি তখন তাঁকে বললেন, “আপনি কি এটা অনুসরণ করেন?” তিনি উত্তর দিলেন, “তুমি কি আমাকে গির্জা থেকে বেরিয়ে আসতে দেখ না কি জিনার (বিশেষভাবে নন-মুসলিমদের দ্বারা পরিহিত এক ধরণের কোমরবন্ধ) পরিহিত অবস্থায় দেখ? আমি রাসূল (সা.)-এঁর একটা হাদীস শুনব আর অনুসরণ করবো না?”
তিনি বোঝাতে চাইছিলেন যে, কেবল একজন অমুসলিম – যেমন একজন খৃষ্টান যে কিনা গির্জায় যায় – কেবল সেই ওরকম আচরণ করতে পারে ৷
আহমাদকে (রহ.) একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আওজায়ীর মতামত অনুসরণ করা ভাল না মালিকের মতামত অনুসরণ করা ভাল? এবং তিনি বলেন,

 “তোমাদের দ্বীনে তোমরা তাদের কাউকেই অন্ধভাবে অনুসরণ করো না ৷ যা কিছু নবী (সা.) ও তাঁর সাহাবীদের কাছ থেকে এসেছে তাই গ্রহণ কর …..৷”

ইমাম আহমাদের পদ্ধতি বর্ণনা করতে গিয়ে দীর্ঘ অধ্যায়ের শুরুতে ইবনুল কাইয়্যেম বলেন, “কোন ব্যাপারে ইমাম আহমাদ যদি একটা দলীল (কুর’আনের আয়াত বা একটি হাদীস) পেতেন, তাহলে তিনি সেই অনুযায়ী ফতোয়া দিতেন এবং এমন কিছু বা কারো ব্যাপারে ভ্রক্ষেপ করতেন না যে সেটার বিরোধিতা করতো – সে যেই হোক না কেন ৷ সেজন্যেই জনৈক মহিলার চূড়ান্ত তালাকের ব্যাপারে তিনি ওমরের (রা.) মতামত বিবেচনা করেননি, বরং তিনি ফাতিমা বিনতে কায়েসের (রা.) হাদীস অনুসরণ করেন …..৷”
এইসব মাযহাবগুলোর সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুসারীরা যুক্তি দেখান যে, তারা যেসব স্কলরদের অনুসরণ করেন তারা কখনোই ইচ্ছে করে রাসূল (সা.)-এঁর কোন হাদীসের বিপক্ষে কোন অবস্থান নেবেন না – যেমনটা আমরা আগেই বলেছি ৷ এ ব্যাপারে একটা ঐক্যমতে পৌঁছানো প্রয়োজন ৷ কারো এই অভিযোগ উত্থাপন করা উচিত নয় যে, এইসব সৎ ও পরহেজগার স্কলারদের কেউ ওরকম একটা কাজ করতে পারেন ৷ এটা একটা স্বীকৃত ব্যাপার যে, কোন কারণ ছাড়া তারা একটা সহীহ হাদীসের বিপক্ষে কখনো কিছু করেন নি ৷ এই যুক্তিতে তাদের অনুসারীরা বলবেন যে, তাদের কোন মতামত যদি একটি হাদীসের বিপক্ষে যায়, তবে সেই হাদীস অবজ্ঞা করার ব্যাপারে তাদের কাছে নিশ্চয়ই অধিকতর গ্রহণযোগ্য কোন যুক্তি ছিল ৷ উদাহরণস্বরূপ, এমন কথা বলা হয় যে, ঐ নির্দিষ্ট হাদীসটি হয়তো মানসুখ বা বাতিল হয়ে গেছে -অথবা- সেটা হয়তো আসলে সহীহ নয়, বা তা হয়তো সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয় ৷
এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে, এরকম একটা যুক্তির পিছনে হয়তো কিছু গ্রহণযোগ্য কারণও থেকে থাকবে ৷ কিন্তু আরো সুচিন্তিত যুক্তিতর্ক এটা প্রতীয়মান করতে পারে যে, এ ব্যাপারে নিরাপদ এবং অধিকতর যুক্তিযুক্ত পদ্ধতি একদমই ভিন্ন ৷
এটা বোঝা উচিত যে, একটা নির্দিষ্ট হাদীস অনুসরণ না করার পিছনে তাদের স্কলারদের পক্ষ হয়ে তারা যে যুক্তি দেখান – সেগুলোই যে কোন নির্দিষ্ট স্কলারের কোন নির্দিষ্ট হাদীস অনুসরণ না করার একমাত্র কারণ, তেমন নয় ৷ আসলে, সেই কারণগুলো হয়তো মোটেই প্রধান কারণ নয় ৷ উদাহরণস্বরূপ: এটা সম্ভাব্য যে, একজন স্কলার হয়তো ঐ নির্দিষ্ট হাদীসটি সম্বন্ধে জ্ঞাতই ছিলেন না ৷ এরকম হওয়াটা অসম্ভব কিছু নয় অথবা এর অর্থ এটাও নয় যে, এমন হলে তা কোন নির্দিষ্ট স্কলারের সামর্থের উপরে কোন কালিমা লেপন করে - এমন কোন সাহাবীই ছিলেন না যিনি রাসূল (সা.)-এঁর সব হাদীসগুলো সম্বন্ধে জ্ঞাত ছিলেন ৷ উপরন্তু এমনও হতে পারে যে, কোন মাযহাবের অনুসারীদের অনুসৃত স্কলার মুহাদ্দিসদের মতো হাদীস শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞ ছিলেন না, আর তাই হয়তো ঐ হাদীসটিকে তিনি দুর্বল ভেবেছেন – সম্ভবত যে উপায়ে তা তার কাছে এসে পৌঁছেছিল সে জন্য ৷ অথচ হাদীস বিশেষজ্ঞরা (পরবর্তীতে হয়তো) ঐ নির্দিষ্ট হাদীসটিকে সহীহ বলে চি‎হ্নিত করেছেন ৷ হাদীস অনুসরণ না করে যে ব্যক্তিটি তার মাযহাব অনুসরণ করার পক্ষে যুক্তি দেখান, সেই যুক্তির চেয়ে আমরা মাত্র যে যুক্তি উপস্থাপন করলাম, তা মোটেই কম গ্রহণযোগ্য নয় ৷ মনে করুন একজন ব্যক্তির কাছে একটা হাদীস উপস্থাপন করা হলো এবং তাকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বলা হলো যে, হাদীসের স্কলাররা ঐ হাদীসটিকে সহীহ বলে নির্ধারণ করেছেন ৷ বাস্তবে এটা হচ্ছে একটা হাদীস যা অন্যান্য মাযহাবগুলো গ্রহণ করে এবং প্রয়োগ করে ৷ এবং ধরে নেয়া যাক যে, ঐ ব্যক্তিটি যে মাযহাবের অনুসরণ করে, হাদীসটি তার বিরোধিতা করে এবং ঐ ব্যক্তিটির কোন ধারণাই নেই যে, তার মাযহাব কেন ঐ নির্দিষ্ট হাদীসটি প্রয়োগ করছে না ৷ এখন ঐ ব্যক্তিটির সামনে দু’টো পথ খোলা রয়েছে:
ক) যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ হাদীসটি অনুসরণ না করার সে কোন কারণ পাচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত সে তা অনুসরণ করতে থাকবে ৷
খ) সে ধরে নেবে যে, ঐ হাদীস মেনে না চলার পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে আর সেজন্য সে ঐ হাদীসের বিপক্ষে তার মাযহাবের মত অনুসরণ করবে ৷
সে যদি উপরের বর্ণিত ‘ক’ অনুসারে চলে, তবে স্বভাবতই দুইয়ের মধ্যে অপেক্ষাকৃত ভাল পথটি বেছে নেবে ৷ এটা যে অপেক্ষাকৃত ভাল পথ তা বলার জন্য বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে ৷ প্রথমত, কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলতে পারবে যে, যা কিছু রাসূল (সা.)-এঁর বক্তব্য হিসাবে তার সামনে উপস্থিত করা হয়েছিল, সে তাই অনুসরণ করেছে ৷ রাসূল (সা.)-এঁর প্রতি আনুগত্যকে ফরজ করে এবং তাঁর আনুগত্যের আদেশ দিয়ে কুর’আনে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ রয়েছে; যদিও আমরা জানি যে, পক্ষান্তরে আবু হানিফা, মালিক, আহমাদ, আস-শাফিঈ বা অন্য কোন ব্যক্তিকে অনুসরণ করার ব্যাপারে কোন আদেশ নেই ৷ সুতরাং এমন যদি দেখা যায় যে, কোন একটা নির্দিষ্ট হাদীস আসলে, উদাহরণস্বরূপ, বাতিল হয়ে গিয়েছিল, তবুও তা অনুসরণ করার ব্যাপারে তার অবস্থান যুক্তিযুক্ত থাকবে এবং ইনশা’আল্লাহ কিয়ামাতের দিন সে নিরাপদ অবস্থানে থাকবে ৷ দ্বিতীয়ত, সেক্ষেত্রে সে তার নিজের ইমামের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে থাকবে ৷ যেমনটা আমরা দেখেছি যে, চারজন ইমামই যখন তাঁদের কোন শিক্ষা নবী (সা.) যা বলেছেন, তার সাথে বিরোধপূর্ণ হবে তখন সেই শিক্ষা প্রত্যাখ্যান করা বা বর্জন করার কথা বলে গেছেন ৷ সুতরাং সেক্ষেত্রে সে যে স্কলারের উপর আস্থাশীল, অর্থাৎ তার ইমাম, তাকে তার ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা করে দিয়ে এবং রাসূল (সা.)-এঁর সুন্নাহ অনুসরণ করে সে আসলে ঐ ইমামরে পরামর্শই মেনে চললো ৷ কিন্তু যদি ঐ ব্যক্তি ‘খ’ তে বর্ণিত পথ অনুসরণ করে, তবে সে আসলে এক ধরণের অনুমানবশত কাজ করা ছাড়া আর কিছুই করলো না ৷ বাস্তবে সে একটা ত্রিমুখী অনুমানের বশবর্তী হয়ে কাজ করলো ৷ প্রথমত, সে অনুমান করছে যে, তার ইমাম বা স্কলার আমাদের আলোচ্য নির্দিষ্ট হাদীসটি সম্বন্ধে জানতেন ৷ দ্বিতীয়ত, সে ধরে নিচ্ছে যে, তার ইমাম বা স্কলার হাদীসটি কোন শ্রেণীর তা জানতেন অথবা হাদীসটি তার ইমামের কাছে গ্রহণযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে পৌঁছেছে ৷ তৃতীয়ত, সে এটা অনুমান করছে যে, তার ইমামের ঐ হাদীস মেনে না চলার জন্য পর্যাপ্ত ও শক্তিশালী যুক্তি বা কারণ ছিল ৷
সম্ভাব্যতার সূত্র বলে যে, কোন একটা ঘটনার জন্য যত বেশী বিষয় অনুমান করা হয়, ঘটনাটার সম্ভাব্যতা তত কমে যায় ৷ আবার সে যখন জানেনা যে তার মাযহাব কেন ঐ নির্দিষ্ট হাদীসটি অনুসরণ করে না, তখন তাকে অবশ্যই ধরে নিতে হবে যে তা অনুসরণ না করার জন্য তাদের খুব ভাল যুক্তি রয়েছে ৷ এটা সত্যি যে, তার স্কলারদের পারদর্শিতার উপর তার আস্থা থেকেই এমনটা মনে হয়ে থাকবে, কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যাপারটা তার পক্ষ থেকে স্রেফ একটা অনুমানের চেয়ে বেশী কিছু বলে মনে করার উপায় নেই – একটা অনুমান যার সত্য হওয়ার সম্ভাব্যতা খুবই ক্ষীণ ৷ কোন ব্যক্তির দ্বীন এবং আমল কেবলমাত্র অনুমানের উপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয় ৷ এটা এমন একটা ব্যাপার যে সম্বন্ধে কুর’আনের বহু আয়াতে আল্লাহ সতর্ক করে দিয়েছেন ৷ উদাহরণস্বরূপ আল্লাহ মূর্তিপূজকদের অনুমানের উপর ভিত্তি করে তাদের ধর্মকর্ম পালনের ব্যাপারে দোষারোপ করেন এবং বলেন:
“তাদের অধিকাংশ অনুমানেরই অনুসরণ করে, সত্যের পরিবর্তে অনুমান কোন কাজে আসে না, তারা যা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ সেই বিষয়ে সবিশেষ অবহিত ৷” (সূরা ইউনূস, ১০:৩৬)
আল্লাহ আরো বলেন:
“অথচ এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা তো কেবল অনুমানেরই অনুসরণ করে ৷ কিন্তু সত্যের মুকাবিলায় অনুমানের কোনই মূল্য নেই ৷” (সূরা আন-নাজম, ৫৩:২৮)
কোন ব্যক্তি যদি এভাবেই নিজের অনুমানের অনুসরণ করেন, তবে তিনি যখন কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াবেন, তখন তার নিজের পক্ষে কোন অজুহাত বা যুক্তি থাকবে না ৷ তার সামনে নবীর (সা.) কথা উপস্থাপন করা হয়েছিল, ওগুলো যে নবীর (সা.) কথা তা সন্দেহ করারও তার কোন কারণ ছিল না, তবু তিনি এজন্য সেগুলো অনুসরণ করেননি যে, তিনি অনুমানবশত ধরে নিয়েছিলেন যে, ঐ কথাগুলো অনুসরণ না করার জন্য তার ইমামের কাছে নিশ্চয়ই কোন কারণ ছিল ৷
সুতরাং, এ ব্যাপারে সঠিক মনোভাব হচ্ছে এই যে, যখন কারো সামনে নবী (সা.)-এঁর একটা সহীহ হাদীস উপস্থাপন করা হয়, তার অবশ্যই সর্বান্তকরণে সেটাকে অনুসরণ করা উচিত, এবং তার সাধ্য অনুযায়ী সর্বতোভাবে তা প্রয়োগ করার আকাঙ্খা হওয়া উচিত৷ যখন সে তা করবে, তখন এই জীবনে সে সবচেয়ে সঠিক রাস্তাটিই এবং আখিরাতের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ রাস্তাটিই অনুসরণ করবে ৷ আল্লাহর রাসূলের (সা.) একটা সহীহ হাদীসকে কেউ কেবল এবং কেবল তখনই পরিত্যাগ করবে, যদি, এর বিপরীতে তার সামনে সমপর্যায়ের শক্তিশালী প্রমাণ উপস্থাপন করা হয় ৷

Tuesday, August 6, 2013

এক নজরে জুম্মাবারে করণীয় এবং বর্জনীয়

- – -জুম্মার দিন যা করণীয়- – -

১) ফজরের সালাত অবশ্যই আজ থেকে জামাতে আদায় করা শুরু করুন যারা প্রতিদিন করেন না । (আল-বায়হাকী , সহীহ আল-আলবানি, ১১১৯)
২) সালাত আল-জুম্মার পূর্বের এবং পরের করণীয়
> জুম্মার দিন গোসল করা
** (সহিহ বুখারী এবং সহিহ মুসলিম : ১৯৫১ এবং ৯৭৭)
> জুম্মার সালাতে শীঘ্রই উপস্থিত হওয়া
** (সহিহ বুখারী এবং সহিহ মুসলিম : ৯২৯ এবং ১৯৬৪)
> পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন করা
** (আল-তিরমিজি, ৪৯৬)
> মনোযোগ সহকারে জুম্মার খুৎবা শোনা
** (সহিহ বুখারী ৯৩৪ এবং সহিহ মুসলিম ৮৫১)
৩) জুম্মার দিন আপনার দুয়া কবুল হবার সেই মুহূর্তটির অনুসন্ধান করুন
** (সহিহ বুখারী এবং সহিহ মুসলিম : ৯৩৫ এবং ১৯৬৯)
৪) সূরা কাহাফ তিলাওয়াত
** (আল-হাকিম, ২/৩৯৯; আল-বায়হাকী, ৩/২৪৯)
বিস্তারিত জানতে http://tiny.cc/29e8jw
৫) আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপর দুরদ পাঠ
** (ইবনে মাজাহ ১০৮৫ , আবু দাউদ , ১০৪৭)
৬) জুম’আর ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে ৪ রাকা’আত সুন্নাত সালাত আদায় করা অথবা বাসায় ফিরে ২ রাকা’আত সুন্নাত আদায় করা । দুটোই সহিহ
** (সহিহ বুখারীঃ ১৮২, সহিহ মুসলিমঃ ৮৮১, আবু দাউদঃ ১১৩০)
৭) জুম’’আর সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা।
** (সহিহ বুখারীঃ ৮৮০)
৮) দু’রাকা’আত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা।
** (সহিহ বুখারীঃ ৯৩০)

- – - যা বর্জনীয়- – -

১> ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হওয়া উচিত নয় । হলে জায়গা পরিবর্তন করে বসা উচিত ।
** (সহিহঃ আবু দাউদঃ ১১১৯)
২> খুৎবার সময় কেউ কথা বললে চুপ করুন’ এটুকুও বলা যাবে না ।
**(নাসায়ীঃ ৭১৪, সহিহ বুখারীঃ ৯৩৪)
৩> ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে বসা উচিত নয়, যদিও এটা কোন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন ।
** (সহিহ হাদিসঃ আবু দাউদঃ ১০৮৯)
৪> আর যারা ধূমপান করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আজ থেকে ধূমপান ছাড়ার পরিকল্পনা করুন । এটি মাখরুহ নয়, তামাক জাতিয় সকল পণ্য পান করা হারাম । বিস্তারিত দেখুন http://goo.gl/FASLq
________________________________
মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র আল কুরআনে বলেনঃ

“إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

“আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন । হে মুমিনগণ ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর । ”
** (সূরা আল আহযাব ৩৩:৫৬)

তাই আসুন আমরা দুরুদ পড়ি এবং অন্যকে উদ্ধুদ্ধ করি ।

আল্লাহ তা’আলা জুম্মার এই দিন সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

” মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর । এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ । অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও । “
(সূরা জুমুআ ৬২:৯-১০)

Thursday, July 25, 2013

ইক্বামাত ও ইক্বামাতের জওয়াব এবং ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানোর নিয়ম

ইক্বামাতঃ
ফরজ সলাত শুরুর পূর্ব মুহুর্তে ইক্বামাত দিতে হয় ।
.ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ. ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ. ﺍﺛﻬﺪ ﺍﻥ ﺍﻝ ﺍﻟﻪ ﺍﻟﻠﻪ. ﺍﺛﻬﺪ ﺍﻥ ﻣﺤﻤﺪﺍ ﺭﺳﻮ ﺍﻟﻠﻪ -ﺣﻲ ﻋﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ .ﺣﻲ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻔﻼﺡ .ﻗﺪ ﻗﺎﻣﺔ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻗﺪﻗﺎﻣﺔﺍﻟﺼﻼﺓ. ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ. ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺪﺭ .ﻻ ﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻠﻪ.

ইক্বামাতের জওয়াবঃ

ইক্বামাত দেয়ার সময় শ্রোতারাও অনুরূপে বলবে ।
শুধুমাত্র হাইয়া 'আলাস সলাহ্ ও হাইয়া 'আলালফালাহ' র স্থলে 'লা-হাওলা ওয়ালা-কূওয়াতা ইল্লা-হ বিল্লা-হ' বলবে।

জামা'আতে ইমাম ও মুক্তাদীর দাঁড়ানোর নিয়ম

১) যিনি ইমাম হবেন তিনি সবার আগে একা দাঁড়াবেন । মুক্তাদীগণ তার পিছনে সারিবদ্ধভাবে কাতার সোজা করে একে অপরের পায়ের সংগে পা ও কাঁধের সংগে কাধ লাগয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবে ।

২) দু'জন পুরুষ হলে ইমাম বাম পাশে এবং মুক্তাদী পাশাপাশি পায়ের সংগে পা ও কাধের সংগে কাধ মিলিয়ে দাঁড়াবে ।
-( বুখারী : ৬৫৭)
কোনরূপ আগপিছ হয়ে দাঁড়াবে না । সলাত শুরু হয়ে যাবার পরে তৃতীয় কোন ব্যক্তি আসলে মুক্তাদীকে পিছনের দিকে ঠেলে নিয়ে পিছনে আলাদা কাতার করবে । ইমামকে ঠেলে সামনে দিবে না।

৩) স্বামী-স্ত্রী একত্রে সলাত আদায় করলে স্ত্রী পিছনে দাঁড়াবে ।
—( তিরমিযী : ১৯৭ )

৪) মেয়েরা বাড়িতে জামা'আতে সলাত আদায় করলে জামা'আতের সময় তাদের মহিলা-ইমাম পুরুষের মতমত সামনে একাকী না দাঁড়িয়ে প্রথম কাতারে অন্যান্য মহিলা মুক্তাদীর পাশাপাশি দাঁড়াবে । জেহরী সলাতে ( যে সকল সলাতে ইমামকে জোর কির'আত করতে হয় ) মহিলা ইমাম নিম্নস্বরে কিরা'আত করবে যেন সাথীরা শুনতে ও বুঝতে পারে ।
—( রসূলুল্ল-হ (সাঃ)— এর সলাত - আবূ মুহাম্মদ 'আলীমুদ্দীন নদিয়াভী ১৯১ পৃঃ )

৫) মাসবূক ( যে ব্যক্তি দু'এক রাক'আত সলাত হয়ে যাবার পর জামা'আতে শামিল হয়েছে ) জামা'আতে শামিল হলে সে প্রথমে 'আল্ল-হু আকবারল' বলে তাকবীর তাহরীমা বাঁধবে, অতঃপর ইমামকে যে অবস্থায় পাবে সে অবস্থায় ইমামের বলে জামা'আতে শামিল হয়ে যাবে —( ঐ ১৮৫-১৬৮ পৃষ্ঠ ) ।
দাঁড়ানোর অপেক্ষা করবে না । ইমামের সালাম ফিরানোর পর মাসবূক ব্যক্তি ঈমামের ছুটে যাওয়া সলাতকে সলাতের প্রথমাংশ বা শুরু ধরে অবশিষ্ট সলাত আদায় করবে । বাকী সলাত সমাধার সময় মুক্তাদী পূর্বে এক রাক'আত পেয়ে থাকলে পরের এক রাক'আতে সুরাহ্ আল ফাতিহাহ্ এর সাথে অন্য সুরাহ্ মিলাবে, এক রাক'আতও না পেয়ে থাকলে দু'রাক'আতে অন্য সুরাহ্ মিলাতে হবে, তবে দু'রাক'আত পেয়ে থাকলে আর মিলাতে হবে না ।
—( ঐ ১৮৫-১৮৬ )

৬) মুক্তাদী সর্বাবস্থায় ইমামের অনুসরণ করে প্রতিটি কাজ অবশ্যই ইমামের পরে পরে করবে সংগে সংগে করবে না ।
—( বুলূগুল মারাম : ৩৯৫ )

ইমাম কে হবেন ? সুত্্রাহ (আড়াল) দেয়ার বর্ণনা

ইমাম →
যে ব্যক্তি সবচাইতে উত্তমভাবে কুর'আন পাঠ করতে পারেন তিনি ইমাম হবেন। এতে কয়েকজন সমান হলে, যে ব্যক্তি বেশী হাদীস জানেন তিনি ইমাম হবেন। এক্ষেত্রেও সমান হলে যিনি পূর্বে হিজরত করেছেন তিনি ইমাম হবেন। এক্ষেত্রেও একাধিক ব্যক্তি থাকলে যিনি বয়সে বড় তিনি ইমামতি করবেন ।
—( তিরমিযী : ২২৩ )

সুত্রাহ (আড়াল) দেয়ার বর্ণনাঃ

শরী'আতের পরিভাষায় থাম,দেয়াল কিংবা সলাত আদায়কারীর সামনে যা রাখা হয় তাকে সুত্রাহ্ বা আড়াল বলে ।
'আব্দুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) বলেন, আল্লা-হর রসূল (সাঃ) ঈদের দিনে যখন বের হতেন তখন একটা ছোট বল্লম নিয়ে যাবার হুকুম দিতেন । অতঃপর সেটা তার (সাঃ) সামনে রাখা হত। অতঃপর তিনি সেটার কাছে সলাত আদায় করতেন এবং লোকেরাও তার পিছনে সলাত আদায় করত । আর তিনি সফরেও এরূপ করতেন ।
—( বুখারী : ৪৪৬ )

রসূলুল্ল-হ (সাঃ) বলেন— " তোমাদের কেউ যখন (ফাকা জায়গায়) সলাত আদায় করবে তখন সে যেন কোন জিনিস দিয়ে তার সামনে আড়াল করে দেয়। যদি সে কোন জিনিস না পায় তাহলে সে যেন ( অন্তত পক্ষে) নিজের সামনে জমিনে একটা রেখা টেনে নেয়, তারপর যে কেউ তার সামনে দিয়ে যাক না কেন তার (সলাতের) কোন ক্ষতি করতে পারবে না । "
—( আবূ দাঊদ, ইবন মাজাহ বরাতে মিশকাত : ৭২৫ )

আল্ল-হর রসূল আরও বলেন : " তোমাদের কেউ যখন সুত্রাহ্ দিয়ে সলাত আদায় করবে তখন কেউ (সুতরার ভিতর দিয়ে) তার সামনে দিয়ে চলে যেতে চাইলে সে যেন তাকে বাধা দেয়। যদি সে বাধা না মানে তাহলে সে তার সাথে যেন লড়াই করে। কারণ, সে একটা সয়তান ।
—( বুখারী, মুসলিম,মিশকাত ৭২১)

রসূলুল্ল-হ (সাঃ) আরও বলেন— সলাত আদায়কারীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার গুনাহ্ কেউ যদি জানতো তাহলে অতিক্রম না করে বরং তার জন্য চল্লিশ বছর দাঁড়িয়ে থাকা শ্রেয়তর হত ।
—( বুখারী : ৪৮০ )

Friday, July 12, 2013

The.Message [ Low Quality ] | মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী

2677.jpg

.:: Part | 1 ::.
___________

Filename : TheMessage-Urudu-AHMAD-1.avi
Date Added : 13 July 2013 17:54
Extention : .avi
File Size : 60223.9 kB


Server 1

Server 2

Server 3

Server 4

Server 5

Server 6

Server 7


.:: Part | 2 ::.
___________

Filename : TheMessage-Urudu-AHMAD-2.avi
Date Added : 13 July 2013 17:57
Extention : .avi
File Size : 79737.4 kB

Server 1

Server 2

Server 3

Server 4

Server 5

Server 6

Server 7

Thursday, July 11, 2013

যেসব কারণে শরীর নাপাক হয় এবং গোসল ফরয হয় ও কিভাবে ফারয্ গোসল করতে হয়।

pure-water-for-a-healthy-home.jpg

পবিত্রতার নির্দেশ
______________

সলাতের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা ফরয ।
—( সূরা আন'নিসা : ৪৩ )
অপবিত্র শরীরে,কাপড়ে ও বিছানা পত্রে সলাত হয় না ।
—( মিশকাত : ২৬২ )

যেসব কারণে শরীর নাপাক হয় এবং গোসল ফারয হয়।
_______________________

(১) সহবাস করলে,
(২) স্বপ্নদোষ হলে,
(৩) স্বপ্নের কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক শরীরে, কাপড়ে বা বিছানায় বীর্যের চিহ্ন দেখতে পেলে,
(৪) স্বামী-স্ত্রীর মিলন হলে বীর্যপাত হোক বা না হোক,
(৫) এছাড়া মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব ( হায়িয) বন্ধ হলে,
(৬) নিফাস ( সন্তান প্রসবের পর যে রক্তস্রাব হয় ) বন্ধ হলে,
(৭) স্ত্রী-পুরুষ কারও উত্তেজনার সাথে বীর্য বের হলে ফরয গোসল ছাড়া সলাত হবে না ।
উল্লেখ্য কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে, মুর্দাকে গোসল দিলে এবং জুমু'আর সলাতের জন্য গোসল করা সুন্নাত ।
—( মিশকাত : ৪১৫, ৪১৯, ৪২১)

পানির বর্ণনা
________________

পানি হলো শারীরিক পবিত্রতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পবিত্র পানি দিয়ে যেন ওযূ,গোসল এবং খাওয়া-দাওয়া করা যায় তার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা কর্তব্য । রসূলুল্ল-হ ( সাঃ ) বলেছেন,
" তোমরা কেউ যেন ঘুম থেকে জেগে দু'হাতের কব্জি পর্যন্ত না ধুয়ে পানির পানির পাত্রে হাত না ডুবায় । কারণ, জানা নেই যে ঘুমন্ত অবস্থায় তার হাত কোথায় কি অবস্থায় ছিল । "
—( মুসলিম : ৫৫৩ )

উল্লেখ্য সমুদ্র, নদ-নদী, খাল-বিল, ঝর্ণা, পুকুর, কুয়া, নলকূপ, ট্যাংক ইত্যাদির পানি সর্বদা পাক হয়ে থাকে । গভীর লতা-পাতা,ঘাস ইত্যাদি পঁচে গেলে অথবা পানিরচর বা রক্তহীন প্রাণী পড়ে মরে গেলেও উক্ত পানি নাপাক হবে না ।
—( মিশকাত : ৪৪৮, ৪৪৯ )

তবে পানি যদি ১৯১-২০০ কেজির চেয়ে কম হয়, তাহলে তা নাপাক । এর বেশী হলে পানি পাক । তাতে ওযূ-গোসল চলবে ।
—( মিশকাতুল মাসাবীহ : ৪৭৭ )

ফরয গোসলের নিয়ম পদ্ধতি
__________________

ফারয্ গোসল পর্দার আড়ালে করা সুন্নাত ।
—( বুখারী : ২৭২ )
( মনে মনে ফরয গোসলের নিয়্যাত করে) প্রথমে উভয় হাত উত্তম হাত উত্তমরূপে ধুয়ে ডান হাতের সাহায্যে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে গুপ্তাংগসহ ( যে সব জায়গায় নাপাকী লেগেছে) ভালভাবে পরিষ্কার করে হাত মাটিতে ঘষে কিংবা সাবান দিয়ে ধুয়ে সলাতের ওযূর ন্যায় ওযূ করতে হবে । অর্থাৎ "বিসমিল্লা-হ" বলে ডান হাতে পানি নিয়ে উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া, তিনবার কুলি করা, তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়া, কপালের গোড়া হতে দুই কানের লতি ও থুঁতনির নীচ পর্যন্ত , প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত তিনবার ধোয়া ( আংগুলে আংটি থাকলে, মেয়েদের হাতে, কানে, নাকে গহনা থাকলে তা নেড়ে-চেড়ে ভিজিয়ে নেয়া, সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করা।, তারপর তিন অনজলি ( দুই হাতের তালু) পানি মাথায় দিয়ে আংগুল দ্বারা চুলের গোড়া ভালভাবে ভিজিয়ে সমস্ত শরীরে এমনভাবে পানি ঢালতে হবে যাতে কোথাও এক লোমকূপ পরিমাণ স্থান শুকনা না থাকে । সবশেষে একটু সরেগিয়ে উভয় পা ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে । তারপর ওযূ শেষের দু'আটি পাঠ করতে হবে । )
—( বুখারী : ২৪১, ২৪২, ২৫২; মুসলিম : ৬২৮ )
'আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, নাবী মুহাম্মদ (সাঃ) ফরয গোসলের পর আর ওযূ করতেন না ।
—( তিরমিযী : ১০৩, মিশকাত : ৪০৯ )

Sunday, June 30, 2013

মসজিদ-এ প্রবেশের এবং বাহির হওয়ার দোয়া

ﺓاللحم افتح لي أبواب ﺩﺣﻤﺘﻚ

উচ্চারণঃ আল্ল-হুম্মাহ তাহ্্লী আবওয়া-বা রহমাতিকা।

অর্থঃ হে আল্ল-হ! তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও।

বের হওয়ার দো'আঃ

اللهة إني اسألك من ﻓﻀﻠﻚ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্'আলুকা মিন ফায্ লিকা।
অর্থঃ হে আল্ল-হ ! অবশ্যই আমি তোমার অনুগ্রহ আশা করছি।
—( মুসলিম, মিশকাত : হাঃ ৬৫১ )

আযান

আযান কি এবং কেন ?
___________

নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)- এর বিখ্যাত মেরাজের সময় হতে দৈনিক পাঁচবার নামায নির্ধারিত হয়। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায মদিনাতে মুসলমানদের জন্য যথাযথ বিধিতে পরিণত হয়। মক্কাতে এই বিধি এভাবে দৃঢ়তা পায়নি, তার একমাত্র কারণ কুরাইশদের বিরামহীন অত্যাচার। মহান ইসলামের যে বীজ একদিন মক্কায় রোপিত হলো, তা ধীরে ধীরে মদিনায় লালন-পালন হতে থাকল। তাই বলা হয়, ইসলামের জন্ম মক্কায়, লালন মদিনায় ও সমাধি দামাস্কাসে। মদিনাতে সেই লালনের পালা আরম্ভ হলো। নামাযে মুসলমানদের আহবান করার প্রয়োজন বোধ করলেন সকলেই। তাই কেউ বললেন- ইহুদীদের মতো তুরী বাজানো হোক,কেউ বা বললেন ইংরেজদের মতো ঘন্টা বাজানো হক। কিন্তু মুসলমানরা কোনটাতেই খুশি হতে পারলেন না।

অবশেষে স্বপ্নাদিষ্ট হযরত ওমরের পরামর্শে নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নির্দেশ দিলেন- মুখে আহবান করো নামাযীগণকে এবং এটাই সবশ্রেষ্ঠ পন্থা বলে বিবেচিত হলো। মসজিদে নববীর নিকটে বানু নাজ্জার গোত্রের এক মহিলার বাড়ি ছিল। হযরত বেলাল (রাঃ) সেই বাড়ির উপরে উঠে সকলকে নামাযের জন্য জোর আওয়াজে আহবান জানাতে থাকলেন। এই আহবান হচ্ছে আযান।

প্রত্যেক ফারয্ সলাতের ওয়াক্তে আযান দেয়া সুন্নাত। রসূলুল্ল-হ (সাঃ) বলেছেন, সলাতের ওয়াক্ত হলে আযান দিবে।
—( বুখারী : হাঃ ৫৬৯ )
ক্বিবলার দিকে মুখ করে শাহাদাত আংগুলদ্বয় কানের ভিতর প্রবেশ করে আযান দিতে হবে।
—( মিশকাত : হাঃ ৬০২ )

আযান আরবি ভাষায়
__________________

Azaan.gif

অর্থঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লহর রসূল। সলাতের জন্য এসো। সলাতের জন্য এসো। কল্যাণ এর জন্য এসো, মুক্তির জন্য এসো। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই।
—( মুসলিম : হাঃ ৭৪৯ )

ফাজরের আযান

Azaan_Falah.gif -র পরে
Azaan_Fajr.gif (অর্থাৎ নিদ্রা হতে সলাত উত্তম) বলতে হবে।
—( মিশকাত : হাঃ ৬০১ )

আজানের জওয়াবঃ আযানের জওয়াবে মুয়াজ্জিন যা বলবেন শ্রোতারাও অনুরূপভাবে বলবে। শুধুমাত্র Azaan_Falah.gifAzaan_Salah.gif স্থলে "লা- হাওলা ওয়ালা- কূওয়াতা ইল্লা- বিল্লাহ" বলবে।
—( বুখারী : হাঃ ৫৭৮)
অতঃপর মুয়াজ্জিন ও শ্রবণকারী উভয়ই দুরূদে ইব্রাহিম পড়বে ( যে দুরূদ সালাম ফিরানোর বৈঠকে আত্তাহিয়াতু এর পর পড়তে হয়।)।
অতঃপর রসূল (সাঃ)- এর জন্য ওয়াসীলাহ্ চাইতে হয়। কারণ, যে ব্যক্তি ওয়াসীলাহ্ চায় তার জন্য রসূল (সাঃ)-এর শাফা'আত হালাল হয়ে যায়।

আযানের পর দো'আ
____________

Azaan_Dua.gif

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা'ওয়াতিত্ তা-ম্মাতি ওয়াস্ সলা-তিল ক্ব-য়িমাতি আ-তি মুহাম্মদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাতা ওয়াবা'আস্হু মাক্ব-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া'আদতাহু।

অর্থঃ এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত নামাযের প্রভু হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাঃ)-কে জান্নাতের সম্মানিত স্থান, ওয়াসীলাহ্ ও মর্যাদা দান কর এবং তাকে মাকামে মাহমুদে পৌঁছে দাও, যে বিষয় তুমি পূর্বেই ওয়া'দা করেছ।
—( বুখারী : হাঃ ৫৭৯ )

Friday, June 28, 2013

যুবকদের এবং যুবতীদের জন্য জানা জরুরি

প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের জানা যা জরুরি
____________________

প্রসাবের রাস্তা দিয়ে প্রসাব ছাড়াও আরো তিন রকম তরল পদার্থ বের হয়– যাকে আরবিতে মনী,মযী ও অদী বলে । এই তিনটির মধ্যে মযী ও অদী বের হলে গোসল ফরয হয় না । বরং প্রসাবের রাস্তা এবং শরীরের কোন জায়গায় বা কাপড়ে ঐ পদার্থ লাগলে তা ধুয়ে ফেলতে হবে । ওযূ অবস্থায় ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে ।

১)মযীঃ যৌন উত্তেজনার সময় বিনা বেগে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে সাদা আঠা যুক্ত যে পানি বের হয় তাকেই মযী বলে । কখনো বিনা অনুভূতিতেও এই পানি বের হয় । সাধারণতঃ যুবক ও সক্তিশালী লোকদের যৌন উত্তেজনার সময় এটা বের হয় । এই মযী সম্বন্ধে রসূলুল্ল-হ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ এর জন্য ওযূ যথেষ্ট ।
—( মুসলিম : হাদিস ৬০৩ )
আর কাপড়ে লাগলে যেখানে লাগবে সেখানে এক আঁজলা (দুই হাতের তালু) পানি দিয়ে ধুয়ে দাও ।
—(তিরমিযী : হাদিস ১১০)

২)অদীঃ প্রস্রাবের পূর্বে কিংবা পরে যে গাঢ় সাদা পানি বের হয় তাকে বলে অদী। অদী সম্পর্কে 'আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন : প্রস্রাবের পর অদী বের হলে লিংগ ও অন্ডকোষ দু'টি ধুতে হবে এবং ওযূ করতে হবে। গোসল করতে হবে না । ইবন 'আব্বাসও তাই বলেন ।
—( বাইহাকী ১ম খন্ড ১১৫ পৃষ্ঠা ও ইবনুল মুনযির, ফিকহুস সুন্নাহ ১ম খন্ড ২৬ পৃষ্ঠা বরাতে আইনী তুহফা সলাতে মুস্তাফা ১ম খন্ড ২০-২১ পৃষ্ঠা )

৩) মনীঃ উত্তেজনার চূরান্ত পর্যায়ে লাম্ফ দিয়ে যে তরল পদার্থ প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে বের হয় তাকে মনী বা বীর্য বলে। বীর্য যদি কোনোরূপ বৈধ বা অবৈধ উপায়ও 'সবেগে' বের হয়, তাহলে গোসল ফরয হয় ।
—( তিরমিযী : হাদিস ১০৯ )

প্রাপ্তবয়স্কা মহিলাদের জন্য জানা একান্ত জুরুরি
____________________

প্রাপ্তবয়স্কা নারীদের প্রত্যেক মাসেই কয়েক দিন করে স্বাভাবিকভাবে যে রক্তস্রাব হয় তাকে মাসিক বা হায়িয বলে । কত বছর বয়সে এই রক্তস্রাব আরম্ভ হবে হাদীসে তার কোন বিবরণ নেই । মেয়েদের যৌবনের সর্বপ্রথম যে কয় দিন রক্তস্রাব হয় সি কয় দিনকেই হায়িযের সময়সীমা ধরে নিতে হবে ।
আর যদি তার প্রথম যৌবনে যে কয়দিন হায়িয হয়েছিল পরের সময়গুলিতে তার পূর্ব দিনগুলো ছাড়িয়ে যায় তবে পূর্বের হিসাবের দিন বাদ দিয়ে অতিরিক্ত দিনগুলোতে গোসল করে সলাত আদায় করতে হবে ।
—( তিরমিযী : হাদিস ১২৩ )
মেয়েদের প্রথম যৌবনে কতদিন স্রাব হয়েছিল তা যদি মনে না থাকে তবে তারা ৬ অথবা ৭ দিন হায়িয ধরে নিয়ে অবশিষ্ট দিনগুলিতে গোসল করে সলাত করে সলাত আদায় করবে ।
—( মিশকাত : হাদিস ৫১৬ )
যে কয়দিন হায়িয থাকবে সে দিনগুলোর নামাজ মাফ, কিন্তু হায়িয অবস্থায় রমাযানের সিয়াম ( রোযা ) না রেখে অন্য মাসে তা আদায় করতে হবে ।
—( মুসলিম : হাদিস ৬৬৯ )

নিফাস
__________

স্ত্রীলোকের সন্তান প্রসবের পর যে রক্তস্রাব হয় তাকে নিফাস বলে । নিফাসের সর্বোচ্চ সময় সীমা ৪০ দিন আর কমের কোন সীমা নেই ।
যখনই রক্তস্রাব বন্ধ হবে গোসল করে সলাত আদায় এবং সিয়াম পালন করতে হবে । নিফাস বন্ধ হবার পরও ৪০ দিন পুরো করার উদ্দেশ্যে সলাত ও সিয়াম (রোযা) বাদ দিলে শক্ত গুনাহগার হতে হবে ।
—( আইনী তুহফা সলাতে মুস্তাফা- আহলে হাদীস লাইব্রেরী ঢাকা ছাপা, ১ম খন্ড, ৬০ পৃষ্ঠা )
হায়িযের অবস্থায় যা নিষিদ্ধ নিফাসের অবস্থায়ও সে সব নিষিদ্ধ ।

ইসতিহাযা
___________

হায়িয ও নিফাসের সময় অতিক্রান্ত হবার পরও যে রক্তস্রাব হতে থাকে তাকেই আরবিতে ইসতিহাযা বলে । বাংলা ভাষায় তাকে প্রদর রোগ বলা হয় ।
মুস্তাহাযা ( যার ইসতিহাযা "প্রদর" বা "দৃষ্টি রোগ" হয়েছে ) স্ত্রীলোক পবিত্র স্ত্রীলোকের মত ।
হায়িযের ক্ষেত্রে যৌবনের প্রথম হায়িযকালে, কিংবা তা মনে না থাকলে ৬/৭ দিন এবং ৪০ দিনের পর শরীরের অংগ বিশেষ হতে রক্ত ধুয়ে ফেলে গোসল করে সলাত ইত্যাদি সমাধা করবে ।
—( তিরমিযী : হাদিস ১২৩ )
যার ইসতিহাযা হয়েছে সে এক গোসলে যুহরের ও 'আসর একত্রে, মাগরিব ও 'ইশা একত্রে আর এক গোসলে ফাজরের সলাত আদায় করবে এবং সে অবস্থায় সিয়াম ( রোযা) রাখতে পারবে ।
— ( মিশকাত : ৫১৬ )

তায়াম্মুম

tayammum1.png

তায়াম্মুম কি?
____________
যদি কারও শরীর ভাল না থাকে এবং পানি না পায়, তবে তার জন্য গোসল বা ওজু করার প্রয়োজন নেই । তার পরিবর্তে সে তায়াম্মুম করতে পারে । তায়াম্মুম হলো– পবিত্র মাটি স্পর্শ যোগে পরিচ্ছন্ন হওয়া।


কোন কোন জিনিস দিয়ে তায়াম্মুম বৈধ হবে?
____________________

আল্লাহ বলেন—
" হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় উপাসনার নিকটবর্তী হয়ো না । যে পর্যন্ত তোমরা যা বল, তা বুঝতে না পার এবং যদি তোমরা পথচারী না হও, তবে অপবিত্র অবস্থাতেও নয়– যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর । তবে তোমরা পীড়িত হয়, অথবা সফরে থাক, অথবা তোমাদের মধ্যে কেউ পায়খানা থেকে আসে, অথবা তোমরা রমণী স্পর্শ ( সহবাস ) কর এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং তার দ্বারা তোমাদের মুখ ও হাত মছে ফেল, নিশ্চই আল্লাহ পাপমোচনকারী, ক্ষমাশীল ।"
— ( সূরা আন’নিসা : ৪৩ )


'পবিত্র মাটি এবং তার ও শ্রেণীভুক্ত সকল বস্তু ( যেমনঃ পাথর,বালি,কাকর,সিমেন্ট প্রভৃতি) দ্বারা তায়াম্মুম শুদ্ধ। ধুলোযুক্ত মাটি না পাওয়া গেলে ধুলাহীন পাথর এবং বালিতে তায়াম্মুম বৈধ হবে ।
—( ফাতাওয়া ইসলামিয়াহ, সউদী উলামা কমিটি ১/২১৮)

শুদ্ধতম হাদীসনুসারে তায়াম্মুম করার পদ্ধতি নিম্মরূপ :
__________________

( নিয়ত করে 'বিসমিল্লাহ্‌' বলে) দু'হাত মাটির উপর মারতে হবে। তারপর তুলে নিয়ে তার উপর ফুক দিয়ে অতিরিক্ত ধুলোবালি উড়িয়ে দিয়ে উভয় হাত দ্বারা মুখমণ্ডল মাসাহ করতে হবে । এরপর বাম হাত দ্বারা ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত এবং শেষে ডান হাত দ্বারা বাম হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করতে হবে ।
—( সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাতুল মাসাহীহ হাদিস নাম্বারঃ ৫২৮ )

তায়াম্মুম কিভাবে নষ্ট হয়?
__________________

যে যে কারণে ওযূ নষ্ট হয় ঠিক সে সে কারণে তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যায় । কারণ তায়াম্মুম হলো ওযূর বিকল্প । এছাড়া যে অসুবিধার কারণে তায়াম্মুম করা হয়েছিল, সে অসুবিধা দূর হয়ে গেলেই তায়াম্মুম শেষ হয়ে যায় । অসুখের কারণে করলে, অসুখ দূর হয়ে যাওয়ার পর পরই তার তায়াম্মুম থাকে না।
—( ফিকহুস সুন্নাহ উর্দু, ১/৬৩)

Wednesday, June 19, 2013

ওযু ভংগের কারণ সমূহ এবং না ভাংগার কারণসমূহ

ওযূ ভংগের কারণ সমূহ নিম্নে দেওয়া হল ।
১) প্রস্রাব ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে,
২) যে সকল কারণে গোসল ফারয হয় তা ঘটলে,
৩) বমি হলে,
৪) ঘুমিয়ে পড়লে,
৫) উটের গোশত খেলে,
৬) আবরণ ছাড়া যৌনাঙ্গে হাত স্পর্শ হলে,
৭) সংগাহীন হয়ে পড়লে,
৮) মাইয়িতের গোসল দিলে,
৯) মযী ( পাতলা বীর্য ) বের হলে ওযূ নষ্ট হয়ে যায়।
—( বুখারি হাদিস নাম্বার : ১৭৭; মুসলিম হাদিস নাম্বার : ৭৬, ৮০, ৮১ )

উল্লেখ্য , সলাত অবস্থায় নাক দিয়ে রক্ত বের হলে- ( বুখারি হাদিস নাম্বার : ১৩৪ ) এবং বিনা হেলানে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে- ( তিরমিযী হাদিস নাম্বার : ৭৭ ) বাতকর্মের গন্ধ বা শব্দ না হলে, সলাত অবস্থায় নাপাকী লাগলে ওযূ নষ্ট হয় না ।( বুখারি হাদিস নাম্বার : ১৭২ )

Tuesday, June 18, 2013

শিরক

ismailishi%2527a.jpg


ভুমিকা
__________

মহান আল্লাহ তা'আলা মানুষকে একমাত্র তারই 'ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন । আল্লাহ বলেন :

" আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমারই ইবাদত করার জন্যে। "
— ৫১. সূরা আয্ 'যারিয়াত : ৫৬

যুগে যুগে তিনি অসংখ্য নাবী ও রাসুলগণকে প্রেরণ করেছেন, পথপ্রদর্শনের কিতাব সমূহ নাযিল করেছেন । যা সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতাকে অস্বীকারের শামিল আর এগুলোই হ'ল শিরক।

শিরক অর্থ
_________________


শিরক হচ্ছে সৃষ্টিকে স্রষ্টার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ করা ।

"যে ব্যাক্তি আল্লাহর সংগে অংশীস্থাপন করে তার জন্য অবশ্যই জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন আর আবাসস্থল জাহান্নাম ।"
— ৫. সূরা আল-মায়িদাহ : ৭২

এ কারণে বান্দার ওপর অপরিহার্য গুরুত্যপূরন কাজ হল 'তাওহীদের' বিসুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করা। নিজের ঈমান 'আক্বীদাহ ও যাবতীয় 'আমল শিরক মুক্ত রাখা, তাই তাওহীদ এর প্রকৃত জ্ঞান না থাকলে কোন জ্ঞানই পরিপূর্ণ ।

শিরক প্রধানতঃ দু' প্রকার :
_______________

ক) বড় শিরক

আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার বানানো, আল্লাহকে ডাকার মতো অন্যকে ডাকা, আল্লাহকে ভয় করার মতো অন্যকে ভয় করা। তার কাজে যা কামনা করা হয় অন্যের কাছে তা কামনা করা । তাকে ভালবাসার মতো অন্যকে ভালবাসা । আল্লাহর সাথে যার অংশীদার করা হয় যে কোন ধরনের 'ইবাদাত তার জন্য নির্দিষ্ট করা। অর্থাৎ

(১) নাবী ও অলীদের ক্ববরের উপর মসজিদ নির্মাণ করা।

(২) আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করে কোন বস্ত হালাল বা হারাম করা।

(৩) মাজারে গমন করা ও তাদের নাম ধরে সরাসরি ওয়াসিলাহ করে দু'আ কামনা করা - এ ধরনের কাজ ও বিশ্বাস নিঃসন্দেহে শিরক ।

(৪) মানুষের তৈরিকৃত আইনকে সন্তুষ্টিচিত্তে গ্রহণ করা, উল্লেখ্য এসব আইন বৈধ মনে করাই হ'ল শিরক ।

(৫) পৃথিবীজুড়ে অনেক সম্মানিত অলী, দরবেশ, কুতুব, সালিহ, মনীষী আছেন যারা মানব সমাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষ ইলাহী শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী তারা মানুষের জীবনে উন্নতি-অবনতি, সুখ-দঃখ, জয় পরাজয় ও লাভ-ক্ষতি এবং সংকটময় মূহুরতে তাদেরকে সাহায্য-সমাধানের মুক্তিদাতা মনে করা সুস্পষ্ট শিরক ।

(৬) মানুষের মধ্যে যে সব লোক অদৃশ্য ও ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে জ্ঞানের অধিকারী বলে পরিচিত-গণক, ভবিষ্যৎ বক্তা, যাদুকর ও ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা ব্যক্তি জ্যোতিষী, হস্তরেখা বিশারদ, যাদুবিদ্যা চর্চা প্রভৃতি শিরক ।

(৭) বর্তমানে শহর গ্রামে ওঝা, দরবেশ, পীর-ফকীর, কবিরাজ, গণক, যাদুকর ও জ্যোতিষীরা নিজেদের অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে ঘোষণা করে । আল্লাহর হুকুমের অমান্য করে নেতা, 'আলিম ও বুযুর্গদের কথা মানাও হল শিরক ।

(৮) অলীগণের মধ্যে গাউস কুতুবরা পৃথিবী পরিচালনা করেন বলে বিশ্বাস করাও শিরক ।

(৯) আউলিয়াদের ক্ববরের পাশে দাঁড়িয়ে বিনয় প্রকাশ করা বা ( মানত ) দেয়াও শিরক ।

( ১০ ) আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট দু'আ বা প্রার্থনা জ্ঞাপক করাও শিরক ।

( ১১ ) আল্লাহর রসুল ( সাঃ )- এর নামে সকাল হয়েছে বলাও শিরক ।

( ১২ ) ক্ববরের দিকে তাকিয়ে সলাত আদায় করাও শিরক ।

( ১৩ ) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু যাবাহ বা কুরবানি করাও শিরক ।

( ১৪ ) বারাকাতের আশায় ক্ববর যিয়ারত করাও শিরক ।

( ১৫ ) আল্লাহর আইন ছাড়া বিচার করা শিরক ।

খ) ছোট শিরক

( ১ ) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে ক্বসম খাওয়া ।
( ২ ) শিরক কুফর যুক্ত ঝাড়ফুঁক, তা'বীজ তুমার ও কবচ হাত বা গলায় ঝুলানো হয় কিংবা কেবল তা'বীজ এর উপর ভরসা করা হয় । যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে হয় কিংবা কেবল তা'বীজ এর উপর ভরসা করা হয় ।
( ৩ ) রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানো 'ইবাদত করা ।
( ৪ ) অমুক না থাকলে আজ মারাই যেতাম ইত্যাদি বলা ।
( ৫ ) যদি কুকুরটা না থাকত তবে অবশ্যই চোর প্রবেশ করত মনে করা ইত্যাদি ।

শিরক এর ভয়াবহ পরিনাম
____________

শিরকের কারনে মানুষ চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে প্রবেশ করবে । শিরক এর কারণে মানুষ দুনিয়াতেই ধ্বংস প্রাপ্ত হয় এবং আখিরাতের চিরস্থায়ী 'আযাব ভোগের উপযুক্ত হয় ।
আল্লাহ বলেন -
" যে ব্যক্তি আমার সাথে শিরক করবে, তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেওয়া হবে, তার ঠিকানা আগুন এবং যালিমদের জন্যে কোন সাহায্য কারি নেই । "
-৫. সূরা-আল'মায়িদাহ : ৭২

"নিশ্চই আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না যে লোক তার সাথে শিরক করে । আর তিনি এর চেয়ে নিম্নপর্যায়ের পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন । "
- ৪. সূরা-আন'নিসা
যদি তারা শিরক করে তাহলে তাদের আমালসমুহ নষ্ট হয়ে যাবে । 'আবদুর রহমান ইবনু আবী বাকরাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একদা আমরা রসুল ( সাঃ ) এর নিকট ছিলাম । তিনি ( সাঃ) বলেন, আমি তোমাদের সবচেয়ে বড় তিনটি পাপের কথা বলব কি ? সাহাবীগণ বলেন : হ্যা ! বলুন । আল্লাহ রাসুল বলেন, আল্লাহর সাথে শিরক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা ।
- ( বুখারি, মুসলিম

শিরকের বাহ্যিক প্রকাশ
_________

বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা আজকে কষ্ট ও মুসীবতে জর্জরিত । তার প্রধান কারণ তাদের মধ্যে শিরক প্রকাশ্যভাবে ও ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে । তার ফলে তারা আজ বিভিন্ন প্রকারের ফিতনাহ-ফ্যাসাদ, যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং ভুমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মত প্রাকৃতিক দূরযোগের সম্মুখীন হচ্ছে । কোনটি শিরক কাজ তা না জানার কারণেও ঐ শিরকের কাজকেই সাওয়াবের কাজ বলে মনে করে ভক্তিসহকারে পালন করে যাচ্ছে ।

Sunday, June 9, 2013

গণিতশাস্ত্র এ মুসলিমদের অবদান

Mathematics.jpg

গণিতশাস্ত্রে মুসলিমদের অবাদান অসাধারণ । 'আল বিরূনী' গণিতশাস্ত্রে বিশ্ববিখ্যাত ছিলেন । তার গ্রন্থ 'আল-কানূন আল মাসউদী'-কে গণিতশাস্ত্রের বিশ্বকোষ বলা হয় । এতে জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, ক্যালকুলাস প্রভৃতি বিষয়ের সূক্ষ্ম, জটিল ও গাণিতিক সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত উৎকৃষ্ট আলোচনা করা হয়েছে । এ গ্রন্থেই তিনি পৃথিবীর পরিমাপ সম্পর্কে যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা বিজ্ঞানিকবিজ্ঞানিক সত্য হিসেবে আজও প্রতিষ্ঠিত । 'মূসা আল খারিযমী'- কে বীজগণিতের জনক বলা হয়। এ বিষয়ে তার রচিত 'হিসাব আল জাবর ওয়াল মুকাবালাহ ' গ্রন্থের নামানুসারে এ শাস্ত্রকে পরবর্তীতে ইউরীপীয়ার 'এলজেবরা' নামকরণ করে । পাশ্চাত্যের গবেষকেরা এ গ্রন্থটিকে দ্বাদশ শতাব্দীতে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেন এবং তখন থেকে ইউরোপের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় এ ষষ্ঠাদশ শতাব্দী পর্যন্ত গণিতের প্রধান পাঠ্যবই হিসেবে পঠিত হয় ।

পদার্থ বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান

300px-CollageFisica.jpg

পদার্থ বিজ্ঞানেও মুসলিমদের অবদান সর্বজনবিদিত । এতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পন্ডিত হচ্ছেন আল কিন্দী। তার রচনার সং্খা কমপক্ষে ২৬৫টি এবং তিনি আরবদের মধ্যে প্রথম মুসলিম দার্শনিক । সুনির্দিষ্ট ওজন, জোয়ার ভাটা, আলোক-বিজ্ঞান এবং বিশেষত আলোর প্রতিফলন সম্পর্কে তার একাধিক গ্রন্থ রয়েছে । আল কিন্দী অস্ত্রের জন্য লৌহ ও ইস্পাত এর জন্য ছোট ছোট বই লেখেন । পদার্থ বিজ্ঞানে আল বিরূনীর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। পদার্থ বিজ্ঞানে তার বৃহত্তম অবাদান হচ্ছে, প্রায় সঠিক ভাবে আঠারটি মূল্যবান পাথর ও ধাতুর সুনির্দিষ্ট ওজন নিরূপণ । পদার্থ বিদ্যায় যার নাম না স্মরণ করলেই নয় তিনি হচ্ছেন একাদশ শতাব্দীর 'হাসান ইবন হায়সাম' । যিনি একাধারে পদার্থবিদ, জ্যোতির্বিদ, অংকবিদ ও চিকিৎসক।

রসায়ন বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান :

chemistry-home.jpg

মুসলিমগন রসায়ন বিজ্ঞানে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন । জাবির ইবন হাইয়্যান-কে আধুনিক কেমিস্ট্রির জনক বলা হয়। তিনি রসায়ন বিষয়ে তার বিভিন্ন গবেষণার উপর প্রায় ৫০০টি আর্টিকেল প্রণয়ন করেন। বিশ্বের বিজ্ঞানীরা 'জাবির ইবন হাইয়্যান- এর অনুসরন করে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নতুন নতুন পদার্থ আবিষ্কাররে পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন । ধাতু সম্পর্কে জাবির ইবনু হাইয়্যানের মৌলিক মতামত আঠার সতক পর্যন্ত ইউরোপের রসায়ন শিক্ষায় বিনা দ্বিধায় গৃহীত হয় ।

Tuesday, May 28, 2013

একজন মুসলমানের পোষাক পরিচ্ছেদ।

নারীদের পোশাকঃ
_____________

Muslim+wear+creation+for+the+kids+from+T


১) যে লেনাস মহিলা পরিধান করবে সেটা যেন ( বেগানা পুরুষের সামনে) সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টি-আকর্ষিক না হয়।
—( সূরা আন-নূর : ২৪/৩১ )

২)লেবাস যেন এমন পাতলা না হয় যেন কাপড়ের উপর থেকেও ভিতরের চামড়া দেখা যায়। এ ধরনের ঢাকা থাকলেও খোলার পর্যায়ভুক্ত।
একদা হাফসাহ্ বিনতে 'আব্দুর রহমান পাতলা ওড়না পরে 'আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর নিকট গেলে তিনি তার ওড়নাকে ছিঁড়ে ফেলেদেন এবং তাকে একটি মোটা ওড়না পরতে দিলেন।
—(মুওয়াত্তা মালিক,মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৭৫)

৩) পোশাক যেন এমন আট-সাট (টাইটফিট) না হয় যাতে দেহের উঁচু নিচু বুঝা যায়।

৪) "সে মহিলার কোন সলাত ক্ববুল হয় না, যে তার স্বামী ছাড়া অন্য কারোর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করে; যতক্ষণ না নাপাকীর গোসল করার মত গোসল করে নেয়। "
—( সুনান আবূ দাঊদ,নাসায়ী,ইবন মাজাহ, বায়হাক্বী,সিলসিলাহ সহীহাহ্, আলবানী ১০৩১)

৫) মহিলাদের লেবাসে চুল,পেট,পিঠ,হাতের কব্জির উপরি ভাগের অংগ (কনুই, বাহু প্রভৃতি) বের হয়ে থাকলে সলাত হয় না। পায়ের পাতা ঢেকে নেয়া কর্তব্য।
—( মাজাল্লাতু বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৬/১৩৮, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদি উলামা-কমিটি ১/২৮৮, কিদাঃ ৯৮ পৃষ্ঠ)

৬) অবশ্য সমনে কোন বেগানা পুরুষ থাকলে চেহারা ঢেকে নিতে হবে। ঘর অন্ধকার হলেও বা একা থাকলেও সলাত আদায় করতে ঢাকা ফারয্, এমন কোন অংগ প্রকাশ পেয়ে গেলে সলাত বাতিল হয়ে যাবে। সে সলাত পুনরায় ফিরিয়ে পড়তে হবে।
Burka.jpg

—( ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্, সঊদী উলামা-কমিটি ১/২৮৫)
[সূত্র : সলাতে মুবাশ্শির ৫৭-৬০ পৃষ্ঠা]



পুরুষদের পোশাক
___________

trad_gown-01.jpg

১) কাধ ঢাকতে হবে ।
—( সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৭৫৪-৭৫৬ )

২) পোশাক নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত অংশ অবশ্যই ঢেকে রাখবে ।
—( সহীহুল জামি' : ৫৫৮৩ )
আর খেয়াল রাখতে হবে, যেন লজ্জাস্থান প্রকাশ না পেয়ে যায় ।
—( ঐ মিশকাতুল মাসাবীহ : ৪৩১৫ )

৩) পুরুষদের দেহ ঊর্ধ্বাংশের কাপড় সংকীর্ণ হলে যেন পেট-পিঠ বের না হয়ে যায়।

৪) লেবাস যেন এমন পাতলা না হয়, যাতে কাপড়ের উপর থেকেও ভিতরের চামড়া দেখা যায় ।

৫) লেবাস যেন কোন কাফিরদের অনুসৃত না হয় ।
মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন, " যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন ( লেবাসে-পোশাকে, চাল-চলনে অনুকরণ ) করবে সে তাদেরই দলভুক্ত । "
—( সুনান আবূ দাঊদ, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩৪৭ )

৬) পুরুষদের জন্য টুপী, পাগড়ী বা রুমাল মাথায় ব্যবহার করা উত্তম ।

৭) গাঢ় হলুদ বা জাফরানি রং এর যেন না হয় । " এগুলো কাফিরদের কাপড়!"
—( সহীহ মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ ৪৩২৭ )

৮) লেবাস যেন রেশমী কাপড়ের না হয় । পরিহিত লেবাস ( পায়জামা, প্যান্ট, লুংগি, যুব্বা প্রভৃতি) যেন পায়ের টাখনুর নিচে না হয় ।

৯) সলাতের জন্য এমন নকশাদার কাপড় হওয়া উচিত নয়, যাতে সলাত আদায়কারীর মন বা একাগ্রতা চুরি করে নেয় ।
—( সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবীহ : ৭৫৭ )

১০) টাইট-ফিট্ প্যান্ট, শার্ট, গেনজি, চুস্ত্ পায়জামা ও খাটো ফতুয়া পরে সলাত মাকরূহ । টাইট হওয়ার কারণে সলাতে একাগ্রতা ভংগ হয় । তাছাড়া কাপড়ের উপর থেকে (বিশেষ করে পিছন থেকে) লজ্জাস্থান ঊঁচু-নীচু অংশ ও আকার বোঝা যায় ।
—( মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ্ ১৫/৭৫)
[ সূত্রঃ সলাতের মুব শশির ৬০-৬৪ পৃষ্ঠা ]

Monday, May 20, 2013

নামাজ এর মৌলিক ধারনা। পর্ব-১

♦বিসমিল্লাহ হিররাহমানির রাহিম ♦

নামায ফারাসী সব্দ । আরবী সালাত অর্থাৎ দোয়া বা প্রার্থনা । ইসলাম ধর্মে অনুষ্ঠনগত ধর্মিও অনুশাসনে র মধ্যে প্রত্যেক মুসলিমদের জন্য প্রতিদিন ৫ বার নামায অতি অবশ্যই পালনীয় এবং অন্যান্য অনুশাসনের মধ্যে এটাই প্রধান অনুশাসন । মহানবি এক বারও এটাকে বাদ দেন্নি । এমনকি মৃত্যুর পুর্ব মুহূর্তেও তার পবিত্র মূখ দিয়ে যে দূটো কথা বের হয়েছিল তাহল - " নামায " ও " গরিব মানুষ" । আল্লাহ তার আপন বাণী পবিত্র কোর-আনে অন্যান্য সকল নির্দেশ অপেক্ষা বেশি নির্দেশ ( ৮২ বার) দিয়েছেন । অর্থাৎ মানুষ যেন সদাই স্মরন করে

কোর-আনে নামাযের নির্দেশ ঃ
১) জামাতে ( একত্রে ) নামায পড়ার নির্দেশ = ২:৪৩
২) মক্কার কাবারগৃহে নামায পড়ার নির্দেশ = ২:১২৫
৩) সং ক্ষিপ্ত ভাবে নামায পড়ার নির্দেশ = ৪:১০১—৩
৪) দৈনিক পাচ বার নামায পড়ার নির্দেশ = ১৭:৭৮,৭৯
৫) স্পষ্ট ও মাঝামাঝি স্বরে নামায পড়ার নির্দেশ : ১৭:১১০,৭৩:১-৬
৬) নামাযে বিনীত ও নম্র হওয়ার নির্দেশ : ২৩:২
৭) নামায সম্পর্কে যত্নবান হওয়ার নির্দেশঃ ২৩:৯
৮) মানুষের কাজ যেন নামাযকে ভুলিয়ে না দেয় : ২৪:৩৭
৯) নামায মানুষকে কদর্যতা ও অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখে : ২৯:৪৫
১০) শুক্রবারের জুমার নামায পড়ার নির্দেশ : ৬২:৯
১১) লোক দেখানো নামায পড়া নিষেধ : ১০৭:৪-৬

♦পাচ ওয়াক্ত নামাযের সময় সূচি ♦

১) ফজরের নামায : সূর্য ওঠার আগে প্রভাত কালীন নামায
( কোর-আনে - ৭:২০৫;২০:১৩০;৩০:১৭;৩৩:৪২;৫০:৩৯;৫২:৪৮;৭৬:২৫)

২) জোহর নামায : মধ্যাহ্ন এর সময় সূর্য যখন ঢলে পড়ে তখন জোহরের সময় হয়

৩) আসর নামায : বিকেলের নামায । ৩ টা থেকে শুরু হয় ।
( কোর-আন = ৩০:১৮,৫০:৩৯)

৪) মাগরিব এর নামায : সূর্যাস্ত এর সাথে সাথে যে নামায হয়
( কোর-আনে = ৭:২০৫,২০:১৩০,৩০:১৭)

৫) এশার নামায : রাত্রির প্রথামাংশের নামায । অর্থাৎ সূর্যের সম্পূর্ণ অস্ত হওয়ার পর যে নামায পরা হয়।
( কোর-আনে = ৫২:৪৯,৭৬:২৬)

♦ অন্যান্য নামায ♦
→জুমার নামায : প্রতি শুক্রবারের জোহরের নামাযের পরিবর্তন করে সকলে একত্রিত হয়ে যে নামায পড়া হয় । ( কোর-আনে ৬২:৯)

→তাহাজ্জুদ নামায : মধ্য রাতের পর যে অতিরিক্ত নামায পড়া হয় ।
( কোর-আনে = ১৭:৭৯,৭৩:২০)

→ ঈদের নামায : ঈদুল ফেতর ও ঈদুল আজহার নামায । যাকে বলা হয় ঈদ ও বকরি ঈদের নামায । সকাল থেকে বেলা ১১:০০ পর্যন্ত পড়া হয়ে থাকে ।
( কোর-আনে = ২:১৮৩,২২:২৬ ও ২৮, ১০৮:২)

→ জানাযার নামায : মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়ার নামায ।

→ এশরাকের নামায : সূয্য ওঠার পরের নামায । এশরাক এর শব্দের অর্থ আলোকিত হওয়া , তাই জগত আলোকিত হওয়ার পর এ নামায পরতে হয়

→ চাশতের নামায : বেশ একটু বেলা হলে যে নামায পড়া হয় । চাশত ফারসি শব্দ । আরবী যোহা । আমাদের দেশে যোহার নামায কেউ বলে না । যেমন - সাল্লাত আরবি শব্দ না বলে এই দেশে সকলে বলে থাকে নামায
→ সূর্য ও চন্দ্র গ্রহনের নামায : চন্দ্র,সূর্য গ্রহণ হলে মহানবি আল্লাহতালা কে স্মরন করতে বলেছেন । কেনন কেয়ামত এর সময় সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণ হবে

→ ইস্তেস্কার নামায : আরবী ' ইস্তেসকার' শব্দের অর্থ পানি চাওয়া । কোন সময় দেশে পানি না হলে মুসলমান গণ নামায সহকারে আল্লাহর নিকট পানি ভিক্কা করা এটাই ইস্তেসকা

→ এস্তেখারার নামায : এস্তেখারা আরবী শব্দ, এর অর্থ কোন জিনিস এর ভাল দিকটা খোজা । নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট মংগল দিকটা জানতে চাওয়া । এটা মহানবীর প্রিয় ছিল ।
( কোর-আনে = ২:২৩)
→তওবা নামায : পাপ করে চরম অনুশোচন সাথে যে নামায পড়া হয় .

আশুরার নামায : ১০ ঈ মহরম তারিখে ঈমাম হোসেন ( রাঃ ) কারবালায় শহিদ হন । তাদের আত্মার মংগল কামনার নামায

Saturday, April 13, 2013

সহীহ মুসলিম | এখন সম্পূর্ণ বাংলায় Download করুন

Sahih-Muslim-Bangla-English.jpg


সহীহ মুসলিম হচ্ছে মুসলিম জগতের ২য় খাটি হাদিস সমূহের সংকলন। এই বইটি লিখেছেন ঈমাম মুসলিম বিন হাজ্জাজ
তিনি ৩ লক্ষের বেশি হাদিস সংগ্রহ করেছিলেন এবং তার মধ্য থেকে ৭,৩০০ টি সহিহ হাদিস বের করেছেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নতের উচু মাকাম নসিব করেন । আমিন।
নিচের থেকে বইটি Download করে নিন।
৮ টি খন্ডে বিভক্ত করা আছে।

১ম খন্ড

২য় খন্ড

৩য় খন্ড

৪র্থ খন্ড

৫ম খন্ড

৬ষ্ঠ খন্ড

৭ম খন্ড

৮ম খন্ড

Friday, April 12, 2013

সহিহ বুখারী শরীফ | এখন সম্পূর্ণ বাংলায় Download করুন।

sahih-bukhari-2nd-part-ecover.jpg

সহীহ বুখারী হচ্ছে ৭,০০০+ হাদিসের সংকলিত একটি বই।
এই বইটি লিখেছেন মুহাম্মাদ ইবন ইসমাঈল আল-
বুখারী
। সহীহ বুখারী হচ্ছে সবচেয়ে খাটি হাদিসের সংকলন । তার নাম অনুসারে এই বইটির নাম দেন সহীহ বুখারী
সহিহ বুখারী শরীফ এখন Download করুন।

১ম খন্ড

২য় খন্ড

৩য় খন্ড

৪র্থ খন্ড

৫ম খন্ড

৬ষ্ঠ খন্ড

৭ম খন্ড

৮ম খন্ড

৯ম খন্ড

১০ম খন্ড

গান - বাজনা কি ইসলামে হারাম ?

86491645.jpg

গান - বাজনা কি ইসলামে হারাম ?
গান-বাজনা(Music) সম্পর্কে কোরআন-হাদিসের
হুকুমঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআন
মাজিদে বলেন,

“এক শ্রেণীর লোক
আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ
থেকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবান্তর
কথাবার্তা সংগ্রহ
করে অন্ধভাবে এবং উহাকে(আল্লাহর পথ)
নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। এদের
জন্যে রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি”।
—[৩১-৬]

আল-ওয়াহিদি (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা), অন্যান্য
তাফসীরকারগণের সাথে ব্যাখ্যা করেন যে, এই
আয়াতে “অবান্তর কথাবার্তা” বলতে গান
সঙ্গীতকে বুঝানো হয়েছে। যেসকল সাহাবাগণ এই ব্যাখ্যা প্রদান করেন তারা হলেন ইবন আব্বাস, ইবন মাসউদ,
মুজাহিদ, ইকরিমা(রাদিয়াল্লাহু আনহুম)। ইবন মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, “আল্লাহর শপথ, যিনি ছাড়া আর
কোন ইলাহ নেই, ‘অবান্তর কথাবার্তা’ হল গান”।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন
হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে। এবং কিছু
লোক এমন হবে যারা একটি পর্বতের নিকটে অবস্থান করবে এবং সন্ধ্যাবেলায় তাদের মেষপালক তাদের নিকট
মেষগুলো নিয়ে আসবে এবং তাদের নিকট কিছু চাইবে, কিন্তু তারা বলবে, ‘আগামীকাল ফেরত এসো’। রাতের
বেলায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন এবং তাদের উপর পর্বত ধ্বসিয়ে দিবেন,
বাকি লোকদেরকে তিনি বানর ও শূকরে পরিণত করে দিবেন এবং শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তারা এই অবস্থায়
থাকবে”। [বুখারী, ভলিউম ৭, বুক ৬৯,সংখ্যা৪৯৪]
এই হাদীসে উল্লেখ হচ্ছে বাদ্যযন্ত্র হারাম, এবং উলামাগণের মধ্যে এই ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। ইবন আল-
কাইয়্যিম (রাহিমুল্লাহ) তাঁর বই ইগাছাতুল লাহফান এ বলেন, “যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন, ‘বৈধ মনে করবে’, তার মানে তিনি বুঝিয়েছেন এটা অবৈধ, এরপর লোকেরা একে বৈধ বানিয়েছে ”।
• আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘একদল
লোকদেরকে তিনি বানর ও শূকরে পরিণত করে দিবেন’ সাহাবাগণ আরজ করলেন, “তারা কি ‘লা~ ইলাহা ইল্লাল্লাহু
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ এই সাক্ষ্য প্রদান করে?” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হ্যাঁ,
এবং তারা সিয়াম ও হজ্জও পালন করে”। সাহাবাগণ আরজ করলেন, “তাহলে, তাদের সমস্যা কি ছিল?”
তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তারা বাদ্যযন্ত্র, ঢোল ও
নারী সঙ্গীতশিল্পী ব্যবহার করবে। (একদিন) তারা রাতভর মদপান, হাসি তামাশা করে নিদ্রা যাবে,
সকালে(আল্লাহর ইচ্ছায়) তারা বানর ও শূকরে পরিণত হবে”। [ইগাছাতুল লাহফান]
• আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের কাবাঘরের চারপাশের ইবাদতের কথা সমালোচনা করে বলেন, “(এ ঘরের পাশে)
তাদের (জাহেলী যুগের)নামায তো কিছু শিষ দেয়া ও তালি বাজানো ছাড়া কিছুই ছিল না”[সূরা আল আনফাল
৮-৩৫] । ইবন আব্বাস, ইবন উমর, আতিয়্যাহ, মুজাহিদ, আদ-দাহাক, আল হাসান এবং ক্বাতাদাহ (রাদিয়াল্লাহু
আনহুম) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘মু’কান’ অর্থ শিষ বাজানো, ‘তাসদিয়াহ’ অর্থ তালি বাজানো।
কুরআন মজীদের অন্য আয়াতে আছে, ইবলিস-শয়তান আদম সন্তানকে ধোঁকা দেওয়ার আরজী পেশ করলে আল্লাহ
তাআলা ইবলিসকে বললেন,
“তোর আওয়াজ দ্বারা তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস পদস্খলিত কর”।-সূরা ইসরা : ৬৪
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যে সকল বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তাই
ইবলিসের আওয়াজ। বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন, ইবলিসের আওয়াজ বলতে এখানে গান ও
বাদ্যযন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেসব
বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তার মধ্যে গান-বাদ্যই সেরা। এজন্যই একে ইবলিসের আওয়াজ
বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৯
বস্তুত গান বাজনার ক্ষতিকর প্রভাব এত বেশি যে, তা নাজায়েয হওয়ার জন্য আলাদা কোনো দলীল খোঁজার
প্রয়োজন পড়ে না। এতদসত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বহু হাদীসের
মাধ্যমে তা প্রমাণিত।
• গান-গায়িকা এবং এর ব্যবসা ও চর্চাকে হারাম আখ্যায়িত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন- তোমরা গায়িকা (দাসী) ক্রয়-বিক্রয় কর না এবং তাদেরকে গান শিক্ষা দিও না। আর এসবের ব্যবসায়
কোনো কল্যাণ নেই। জেনে রেখ, এর প্রাপ্ত মূল্য হারাম।-জামে তিরমিযী হাদীস : ১২৮২; ইবনে মাজাহ হাদীস :
২১৬৮
বর্তমানে গান ও বাদ্যযন্ত্রের বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে যাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
মনে রাখতে হবে, এর সকল উপার্জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস অনুযায়ী সম্পূর্ণ
হারাম।
• রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম
পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে।
আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন।-সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ৪০২০; সহীহ ইবনে হিব্বান
হাদীস : ৬৭৫৮
• হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের
অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে।-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৩; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫২
উপরোক্ত বাণীর সত্যতা এখন দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার। গান-বাজনার ব্যাপক বিস্তারের ফলে মানুষের
অন্তরে এই পরিমাণ নিফাক সৃষ্টি হয়েছে যে, সাহাবীদের ইসলামকে এ যুগে অচল মনে করা হচ্ছে এবং গান-বাদ্য,
নারী-পুরুষের মেলামেশা ইত্যাদিকে হালাল মনে করা হচ্ছে।
• বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত নাফে’ রাহ. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার চলার পথে আবদুল্লাহ
ইবনে উমর রা. বাঁশির আওয়াজ শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুই কানে আঙ্গুল দিলেন। কিছু দূর
গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নাফে’! এখনো কি আওয়াজ শুনছ? আমি বললাম হ্যাঁ। অতঃপর আমি যখন বললাম, এখন
আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না তখন তিনি কান থেকে আঙ্গুল সরালেন এবং বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন। -মুসনাদে আহমদ হাদীস :
৪৫৩৫; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪৯২৪ বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. থেকেও এমন একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।-
ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৯০১
বাজনাদার নুপুর ও ঘুঙুরের আওয়াজও সাহাবায়ে কেরাম বরদাশত করতেন না। তাহলে গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রশ্নই
কি অবান্তর নয়?
নাসাঈ ও সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে, একদিন হযরত আয়েশা রা.-এর নিকট বাজনাদার নুপুর
পরে কোনো বালিকা আসলে আয়েশা রা. বললেন, খবরদার, তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ
করবে না। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।-সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ
হাদীস : ৫২৩৭
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হল
শয়তানের বাদ্যযন্ত্র।-সহীহ মুসলিম হাদীস : ২১১৪
মৃদু আওয়াজের ঘণ্টি-ঘুঙুরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আধুনিক সুরেলা বাদ্যযন্ত্রের বিধান কী হবে তা খুব
সহজেই বুঝা যায়।
সঙ্গীত সম্পর্কে উলামাগণের অভিমত
ইমাম ইবন তাইমিয়া (রাহিমুল্লাহ) বলেন, “যে সকল কাজ শয়তানের পথকে শক্তিশালী করে তাদের মধ্যে গান
বাজনা শোনা এবং অন্যায় হাসি তামাশা অন্যতম। এটা সেই কাজ যা কাফেররা করত। আল্লাহ তায়ালা বলেন “(এ
ঘরের পাশে) তাদের (জাহেলী যুগের)নামায তো কিছু শিষ দেয়া ও তালি বাজানো ছাড়া কিছুই ছিল না”[সূরা আল
আনফাল ৮-৩৫]। ইবন আব্বাস, ইবন উমর, আতিয়্যাহ, মুজাহিদ, আদ-দাহাক, আল হাসান এবং ক্বাতাদাহ
(রাদিয়াল্লাহু আনহুম) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘মু’কান’ অর্থ শিষ বাজানো, ‘তাসদিয়াহ’ অর্থ
তালি বাজানো। এটা মুশরিকদের উপাসনার পথ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর
সাহাবাগণ আল্লাহর ইবাদত করেছেন, তাঁর( আল্লাহর) আদেশ অনুসারে, তাদের ইবাদতে ছিল কুরআন তিলাওয়াত ও
যিকর(দু’আ)। এমনটা কখনো হয়নি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাহাবাগণ
(রাদিয়াল্লাহু আনহুম) গান-বাজনা শোনার জন্যে সমবেত হয়েছেন এবং যার সাথে তালি বাজানো হত অথবা ঢোল
ব্যবহার করা হত”।
ইমাম ইবন তাইমিয়া (রাহিমুল্লাহ) আরো বলেন সেই ব্যক্তির সম্পর্কে যার স্বভাব হল গান-বাজনা শোনা, “ সে যখন
কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করে তখন সে আবেগাপ্লুত হয় না, অপরদিকে সে যখন শয়তানের বাদ্যযন্ত্র (গান-বাজনা)
শ্রবণ করে, সে নেচে উঠে। যদি সে সালাত প্রতিষ্ঠা করে, তবে সে হয় বসে বসে তা আদায়
করে অথবা মুরগী যেভাবে মাটিতে ঠোকর দিয়ে শস্যদানা খায় সেভাবে দ্রুততার সাথে আদায় করে। সে কুরআন
তিলাওয়াত শ্রবণ করতে অপছন্দ করে এবং তাতে কোন সৌন্দর্য খুঁজে পায় না। তার কুরআনের প্রতি কোন রুচি নেই
এবং যখন তা পড়া হয় সে এর প্রতি কোন টান বা ভালোবাসা অনুভব করে না। বরং, সে মু’কা ও
তাসদিয়া শুনে মজা পায়। এগুলো শয়তানী আনন্দ এবং সে তাদের অন্তর্ভুক্ত যাদের সম্পর্কে আল্লাহ
তায়ালা বলেন, “যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে একটি শয়তান নিযুক্ত
করে দেই, অতঃপর সেই সর্বক্ষণ তার সাথী হয়ে থাকে”।[৪৩-৩৬] [আউলিয়া আর রাহমান]
ইমাম ইবন আল-কাইয়্যিম (রাহিমুল্লাহ) বলেন, “ আল্লাহর শত্রু শয়তানের কৌশলসমূহের মধ্যে একটি হল মুকা ও
তাসদিয়া, এই ফাঁদ সে ঐ সকল লোকের জন্য পাতে যারা দীনের প্রতি বুদ্ধিমত্তা,জ্ঞান,অথবা আন্তরিকতায়
নিরাসক্ত। এই গাফেল(মূর্খ) লোকেরা গান-বাজনা শ্রবণ করে এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে, যা নিষিদ্ধ এবং যার
ফলে কুরআনের প্রতি তাদের অন্তর বিমুখ হয়ে যায়। তাদের হৃদয় পাপাচারের প্রতি উদাসীন ও আল্লাহর অবাধ্য।
গান-বাজনা(সঙ্গীত) শয়তানের কুরআন এবং ব্যক্তি ও আল্লাহর মাঝের দেয়াল। এটা সমকামিতা ও ব্যভিচারের
পথ। যে অন্যায় ভালোবাসার সন্ধান করে ও স্বপ্ন দেখে সে এতে সান্ত্বনা খুঁজে পায়। গান-বাজনার
প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে ও একে তাদের চোখে শিল্প হিসেবে দেখিয়ে শয়তান দুর্বলচিত্তের মানুষদের
ফাঁদে ফেলে। শয়তান তার অনুসারীদের সঙ্গীতের সৌন্দর্যের মিথ্যা দলীল দেখায়। এই লোকগুলো শয়তানের
ওহী গ্রহণ করে এবং ফলস্বরুপ কুরআন ত্যাগ করে।"
যখন আপনি তাদের গান-বাজনা শোনা অবস্থায় দেখেন, তাদেরকে বিনয়াবত,অলসভাবে বসা,নীরব নিশ্চুপ
অবস্থায় পাবেন; তাদের অন্তর দিয়ে তারা মনোযোগ দেয় এবং চরমভাবে গান বাজনা উপভোগ করে। তাদের অন্তর
গান বাজনায় এতটা নৈকট্য পায়, যেন তারা মাতাল। তারা নেচে উঠে এবং কুরুচিপূর্ণভাবে পতিতাদের মত
অঙ্গভঙ্গি করে। এবং কেন নয় ? কারণ তারা সঙ্গীতে মত্ত মাতাল, অনুরুপ তাদের আচরণ। তারা আল্লাহর
জন্যে নয়, তারা শয়তানের জন্য, এগুলো ঐ সকল হৃদয় যা পাপাচারে নাজুক, এদের জীবন আল্লাহর
সন্তুষ্টি বাদে অন্য যেকোন কিছুর জন্য। তারা তাদের জীবন হাসি তামাশায় কাটায় ও দীনের প্রতি তামাশা করে।
শয়তানের যন্ত্র তাদের নিকট কুরআন অপেক্ষা মধুর। তাদের কেউ যদি কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে,
সে এতে সামান্যই প্রভাবিত হবে। আর যদি শয়তানের কুরআন শোনানো হয়, তারা অন্তরে আনন্দ অনুভব
করে এবং নিজের চোখেই তারা এটা দেখতে পায়। তাদের পা নাচে, হাত তালি বাজায়, নিঃশ্বাস ঘন
হয়ে আসে এবং সারা শরীর আনন্দ উপভোগ করে। ওহে যে এই ফাঁদে আটকে আছো !
যে আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানের নিকট বিক্রি হয়ে গেছো , কত বাজে তোমার এই কারবার ! যখন কুরআন শ্রবণ কর
কেন তুমি আনন্দ পাও না? যখন মহিমান্বিত কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন কেন শান্তি স্বস্তি পাও না ? হায়,
সবাই তাই খুঁজে যাতে সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে, এবং শেষ পর্যন্ত সত্যিই নিজেকে মানিয়ে নেয়”।
[ইগাছাতুল লাহফান]
শেখ আব্দুল আযীয বিন বায(রাহিমুল্লাহ) এর কাছে গান বাজনা সম্পর্কে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল,
“এটা কি হারাম? আমি শুধু আনন্দের জন্যেই শুনি। রাবাবা(এক প্রকার গিটার) ও হারানো দিনের গান
সম্পর্কে কি বলেন? আর বিয়ে শাদীতে ঢোল ব্যবহার সম্পর্কে?”
শেখ বিন বায বলেন, “ গান বাজনা শোনা হারাম এবং পাপ। এটা হল সেই কাজ যার ফলে আল্লাহর স্মরণ ও
প্রার্থনা থেকে অন্তর দুর্বল করে দেয়। কুরআনের আয়াত “এবং সেই মানুষগুলো যারা অর্থহীন কথাবার্তা ক্রয়
করে” [সুরা লুকমান ৩১-৬] , এখানে “অর্থহীন কথাবার্তা” বলতে গান বাজনাকে বোঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন
মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু), যিনি একজন বিশিষ্ট সাহাবী, তিনি আল্লাহর শপথ করে বলেছেন এর মানে হল গান।
আর গান যদি রাবাবা এর সাথে হয়,উ’দ(আরবীয় গিটার), বাঁশি কিংবা ঢোলের সাথে হয়,
তবে তো আরো বেশি হারাম। যে কোন গান, যেকোন প্রকার বাদ্যযন্ত্র সহকারেই হোক তা হারাম এবং আলেমগণ এ
ব্যাপারে একমত। সুতরাং, মুসলমানদের এ ব্যাপারে সাবধান হওয়া উচিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র
পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে”[বুখারি]। আমি আপনাকে(প্রশ্নকর্তাকে)
রেডিওতে কুরআনিক অনুষ্ঠান শোনার উপদেশ দিতে পারি, এভাবে একজন স্বস্তি খুঁজে পাবে এবং নিজেকে গান
বাজনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে।
আর বিয়ে শাদীর ব্যাপারে, দফ [এক প্রকার আরবীয় বাদ্যযন্ত্র, দফ-এর এক পাশ খোলা। বাজালে ঢ্যাব ঢ্যাব
আওয়াজ হয়। প্লাস্টিকের গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হবে তেমন। আসলে দফ কোনো বাদ্যযন্ত্রের
পর্যায়ে পড়ে না। আওনুল বারী গ্রন্থে দফ-এর পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে যে, এর আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয়
এবং সুরেলা ও আনন্দদায়কও নয়। কোনো দফ-এর আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তখন তা আর দফ থাকবে না;
বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হবে।-আওনুল বারী ২/৩৫৭ । আর দফ-এর মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে তখন
তা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয বলে পরিগণিত হবে] ব্যবহার করা যেতে পারে এমন কথার গানের সাথে যাকে পাপ
বলা যায় না। আর এটা রাতে করা যেতে পারে, কেবলমাত্র বিয়ে শাদীতে, কেবলমাত্র মহিলাদের
জন্যে এবং মহিলাদের দ্বারা। এই গীতসমূহ ইসলামিক বিয়ে ঘোষণার একটি অংশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ হতে তা প্রমাণিত। এবং ড্রামস তথা ঢোলের ক্ষেত্রে, তা সর্বক্ষেত্রে হারাম।
দফ কেবলমাত্র বিয়ে শাদীতে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং শুধুমাত্র মহিলাদের দ্বারা শুধুমাত্র মহিলাদের জন্যে”।
সাহাবী ও তাবেয়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী বহু গুনাহর সমষ্টি হল গান ও বাদ্যযন্ত্র। যথা :
• ক) নিফাক এর উৎস
• খ) ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী
• গ) মস্তিষ্কের উপর আবরণ
• ঘ) কুরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী
• ঙ) আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী
• চ) গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী ও
• ছ) জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী।–[ইগাছাতুল লাহফান ১/১৮৭]
চার ইমামের ভাষ্য:
গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-
অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সকলেই গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ইমাম মালেক রাহ. কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে।-
কুরতুবী ১৪/৫৫ ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেছেন যে, গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক।তিনি আরো বলেন,
সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ
করা হবে না।-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৭৯; কুরতুবী ১৪/৫৫
হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা আলী মারদভী লেখেন, বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী। আর
যদি বাদ্য থাকে তবে তা হারাম।-আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৮৮
ইমাম শাফেয়ী রাহ. শর্তসাপেক্ষে শুধু ওলীমা অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশ আছে বলে মত দিয়েছেন।
কেননা বিয়ের ঘোষণার উদ্দেশ্যে ওলীমার অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশের বর্ণনা হাদীসে রয়েছে।-
জামে তিরমিযী হাদীস : ১০৮৯; সহীহ বুখারী হাদীস : ৫১৪৭, ৫১৬২ মনে রাখতে হবে, এখানে দফ বাজানোর
উদ্দেশ্য হল বিবাহের ঘোষণা, অন্য কিছু নয়।-ফাতহুল বারী ৯/২২৬

Monday, April 8, 2013

নামাযের শারীরিক উপকারিতা।

★বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম★
এটা এই ব্লগ এর প্রথম পোষ্ট
দয়া করে পোষ্টটি পরুন এবং ছরিয়ে দিন সবার কাছে।

muslims-offering-namaz-at110909094628.jp

সিজদা যত দীর্ঘ হবে ততই বেশি রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এভাবে নবী করীম (স.) দীর্ঘ সেজদার ফজিলত বর্ণনা করেন।
এভাবে নামাজীর জ্ঞান, বুঝ, স্মৃতি এবং মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্য দীর্ঘ বয়স পর্যন্ত সুস্থ থাকে।
আজ বস্তুবাদীরাও স্বীকার করে যে, জোড়ার ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য নামাজ ব্যতীত আর কোনো ব্যবস্থাপত্র নেই।
এটা তেমনি ভেতরের অঙ্গগুলো যেমন- হূদয়, প্লীহা, জঠর, ফুসফুস, মগজ, অন্ত্র, পাকস্থলী, মেরুদন্ডের হাড়, ঘাড়, বুক
এবং দেহের সকল গ্লান্ড ইত্যাদি সুদৃঢ় ও উন্নত করে এবং দেহের সিডিউল এবং সৌন্দর্য রক্ষা করে।
সালাত হার্ট এ্যাটাক, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস মেলিটাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। হার্টের রোগীদের প্রতিদিন বাধ্যতামূলক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা উচিত
জার্মানের প্রসিদ্ধ পত্রিকা ‘ডি হায়েফ’-এ প্রসিদ্ধ জার্মান মান্যবর ও প্রাচ্যবিদ জাওয়াকীম ডি জুলফ এ সত্যকে প্রকাশ
করেছেন তার জবানীতে।